ওমানের ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান স্থগিতকে অস্থায়ী বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি শিগগিরই এর সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ওমান সরকারের সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক নয় বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির ঢাকা দূতাবাস।
ঢাকার ওমান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে মূল্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে ওমান।
বাংলাদেশিদের ওমানের ভিসা স্থগিতের সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক নয়: ওমান দূতাবাস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ‘হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে। এটি খুব অস্থায়ী পদক্ষেপ হতে পারে। আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে খুব শিগগিরই এর সমাধান হবে।’
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশিদের একটি বার্তা দিতে চান, কেউ যেন অবৈধভাবে না যায়। ‘আমরা নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন চাই।’
বাংলাদেশিদের সব কাগজপত্র সঠিক নিয়মে প্রস্তুত করার এবং বিদেশে যাওয়ার আগে প্রথমে চাকরি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই প্রকিয়াকে স্বাগত জানাই। আমরা তাদের (ওমান) কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। শিগগিরই তা পুনরায় চালু করা হবে।’ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যারা ভিসা পেয়েছেন তারা ওমানে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশি নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে ওমান
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৬০-৭০ হাজার। তা বহুগুন বেড়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা ওমানের বিদেশি শ্রমিকের প্রায় অর্ধেক।
বাংলাদেশ ও ওমানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক, তবে সামান্য অপব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
শাহরিয়ার বলেন, চাকরির নামে যারা ওমানে লোক এনেছে ওমান সরকার তাদের সম্পর্কে বাংলাদেশকে জানালে সরকার তাদের আইনের আওতায় আনবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে গেলে শ্রমবাজারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়।
ওমানের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশিদের ওমানের ভিসা স্থগিতের সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের ওমান দূতাবাস।
জনশক্তি সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে আগ্রহী ওমান
দূতাবাস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে নিশ্চিত করতে চাই, ওমান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও প্রশংসার সঙ্গে স্মরণ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আন্তরিকভাবে মূল্যায়ন করে ওমান।’
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকার ওমান দূতাবাস।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের ভিসাদান স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি দেশটিতে বিদেশি শ্রম বাজারসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের পরিচালিত সমীক্ষা পর্যালোচনার অংশ। এটি ওমানি শ্রম বাজারের চাহিদা ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার একটি প্রয়াস; যা বর্তমান শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ভিসাদান স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও সমভাবে কার্যকর করা হয়েছে এবং এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে পুনরায় ভিসাদান কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও প্রশংসার সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওমানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে ওমান। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করতে ওমান সবসময়ই আগ্রহী।
উল্লেখ্য, পর্যালোচনা প্রক্রিয়াটি বেশ কিছু কারিগরি ও আইনি কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যার লক্ষ্য প্রবাসী শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার স্বার্থ রক্ষা করা। পাশাপাশি ওমানে বিদেশি শ্রম বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।