‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই স্লোগান নিয়ে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের আখড়া বাড়িতে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের স্মরণোৎসব।
এ আয়োজনকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ায় মরা কালিগঙ্গা নদীর তীরের আখড়া বাড়িতে এখন সাজ সাজ রব। এছাড়া ইতোমধ্যে এ উৎসবের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে আয়োজকরা।
লালন স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো এবারও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে লালন একাডেমি।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা, ৭ আসামির যাবজ্জীবন
এছাড়াও মূল মাজারের সামনে মরা কালী নদী প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
ইতোমধ্যে এই আয়োজনকে ঘিরে দেশের দূর-দুরান্ত থেকে লালন ভক্ত ও সাধুরা লালনের মাজারে আসতে শুরু করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিন দিনব্যাপী এ স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
সোমবার (৬ মার্চ) তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান শেষ হবে।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতি বছর লালনের আখড়াবাড়িতে দোলৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ।
তবে পবিত্র শবে বরাতের কারণে এবার শত বছরের নিয়ম ভেঙে পূর্নিমার পরিবর্তে দ্বাদশি তিথি থেকে সরকারিভাবে এ উৎসব শুরু হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে পূর্নিমার আগের দিন।
তবে লালনের মূলধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা আসবেন তারা পরম্পরা মেনে ৬ মার্চ দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করবেন এবং পরের দিন ৭ মার্চ দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করবেন সাধুসঙ্গ।
ভাববাদী লৌকিক ভাবাদর্শের স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন। তার জীবদ্দশায় এমন ফাল্গুনের জোৎনালোকের রাত্রিতে বসতো দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে সাধুসঙ্গ।
এই উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালনেরর আবির্ভাব ঘটেছিলো ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে।
এদিকে তিন দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গনে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন ভক্ত সাধু, লালন অনুসারী, আর দর্শনার্থীরা।
এছাড়া উৎসবকে ঘিরে লালন আঁখড়াবাড়িতে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম।
মাজারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শেষ হয়েছে মাজার প্রাঙ্গণ ধোয়া-মোছার কাজও।
এদিকে কালি নদীর পাড়ে বসেছে বিশাল মেলা। লালন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে আলোচনা সভা এবং রাতভর লালন গানের জন্য।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম জানান, অনুষ্ঠানকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকশ’ সদস্য এই তিন দিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশেপাশে কেউ যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী জানান, লালনের মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা সামগ্রিকভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে ভক্তদের মাঝে। পাশাপাশি আধ্যাত্ম-সাধনার নিগুড় পদ্ধতি গুরু-শিষ্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তার গানের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় গড়াই নদীর পাড়ে রাসেল ভাইপার