রবিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রধান অতিথি হিসেবে জিআই সনদের সার্টিফিকেট বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলামের হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে নূরুল মজিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত। যারা আম নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছেন তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। আম ও কৃষি ভিত্তিক শিল্পায়ন নিয়ে গবেষণায় সরকারের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যেতে হবে।’
জিআই স্বীকৃতি আম চাষী, ব্যবসায়ী ও কৃষি ভিত্তিক উদ্যোক্তাদের উপকার করবে বলে আশা করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চাহিদা পূরণ করে আমাদের নিজস্ব পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। সুস্বাদু আম প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রকারের আমসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আরো পণ্য শিগগিরই জিআই সনদ পাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘অশ্বিনা’ ও ‘ল্যাংড়া’ আমকেও জিআই সনদ দিতে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরকে (ডিপিডিটি) নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের জিআই সনদ প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে এবং বিশ্বব্যাপী আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়াবে।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩ হাজার ৪০০ একর জমিতে ৩৫০০ মেট্রিক টন খিরসাপাত আম উৎপন্ন হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সার্টিফিকেট পাওয়ার পর চাষীরা বেশি বেশি আম চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ভবিষ্যতে আমাদের উত্পাদন বৃদ্ধি হবে।’
জিআই হচ্ছে মেধাসম্পদের অন্যতম শাখা। কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া, জলবায়ু ও ওই দেশের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি অনন্য গুণমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেটিকে ওই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। একই গুণমানসম্পন্ন সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হলেও দীর্ঘ সময় ধরে জিআই আইন না থাকায় এ দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের মালিকানা সুরক্ষার সুযোগ ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এবং ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। এরপরই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য নিবন্ধনের পথ সুগম হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমকে জিআই সনদ দিতে আবেদন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) দেশের প্রথম ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে জামদানিকে জিআই নিবন্ধন দেয়। পরবর্তীতে জাতীয় মাছ ইলিশ জিআই সনদ লাভ করে। এবার দেশের তৃতীয় পণ্য হিসেবে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম’ জিআই নিবন্ধন পেল।
‘খিরসাপাত’ বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘হিমসাগর’ আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত আমের শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমই খিরসাপাত জাতের। এ জাতের আম প্রতিবছর রপ্তানি হওয়া আমের তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি হচ্ছে। খিরসাপাত আমের বিপুল সম্ভাবনা বিবেচনা করে এর জিআই নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়।