বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সবুজ রূপান্তর শীর্ষক সংলাপে যোগ দিয়েছেন সুইডেনের রাজকন্যা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র শুভেচ্ছাদূত ভিক্টোরিয়া।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঢাকায় ইউএনডিপি ও সুইডেন দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করা: টেকসই আগামীর জন্য সরকারি-বেসরকারি-উন্নয়ন সহযোগিতা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সবুজ রূপান্তর প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এ সংলাপ আয়োজন করা হয়।
টেকসই উন্নয়ন বলবৎ রাখার যৌথ প্রয়াস হিসেবে, এই সংলাপে সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার মূল অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
গত বছরের অক্টোবর থেকে টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জলবায়ু মোকাবিলায় এসডিজির পক্ষে বৈশ্বিক জনমত তৈরির উদ্দেশ্যে ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া। এই সংলাপে তার উপস্থিতি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার গুরুত্বকেই আরও জোরদার করে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সবুজ রূপান্তরে বেসরকারি খাতের ভূমিকার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা মাসরুর রিয়াজ।
জ্বালানিখাতে সবুজ রূপান্তরের জন্য চালিকা শক্তি, চ্যালেঞ্জ ও কৌশলগুলো নিয়ে ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমানের তত্ত্বাবধানে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভায় ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক সুইডিশ মন্ত্রী ইয়োহান ফরসেল, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং ইউএনডিপির এক্সটারনাল রিলেশনস ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক উলরিকা মদির এবং ‘এসবিকে টেক ভেঞ্চারস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে সালমান এফ. রহমান বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা রয়েছে, আর এতেই স্পষ্ট হয় টেকসই পরিবেশ ও নিরাপত্তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। টেকসই পণ্যের জন্য অবশ্যই বেশি বিনিয়োগ করতে হবে এবং ক্রেতাদেরও বাড়তি মূল্য পরিশোধের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে।
সুইডিশ মন্ত্রী ইয়োহান ফরসেল বলেন,‘এখানে প্রচুর পরিমাণে বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে এবং আমরা যদি এর কিছু শতাংশ দারিদ্র্যদূরীকরণে ব্যয় করতে পারি তবে এটি একটি বিশাল প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে। বাংলাদেশে আমাদের ৫০টিরও বেশি সুইডিশ কোম্পানি কাজ করছে। আমি মনে করি এটা বেশ ভালো একটা খবর কিন্তু আমাদের সামনে আরও ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে।’
বাংলাদেশে সুইডিশ কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোও সুইডেন ও ইউরোপে বিনিয়োগ করবে। এই অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত জায়গায় নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব উলরিকা মদির বলেন, ‘উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সত্যিই অসাধারণ। তাছাড়া, বাংলাদেশকে এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে যার জন্য আদতে তার নিজের জনগণ দায়ী নয়। আর এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা প্রয়োজন পারস্পরিক সংহতি, কারণ কিছু সমস্যা সবাইকে একসাথে সমাধান করতে হবে। আমাদের একে অন্যের কথা শুনতে হবে, নিজ নিজ আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করতে হবে এবং সবাই নিজ নিজ অঙ্গীকারকে কার্যকর করতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য উভয়ের জন্য আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সমাধানে পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।
বেসরকারি খাতের দায়িত্ব সম্পর্কে সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে বেসরকারি খাতকে উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং তা অবশ্যই নীতিমালা মেনে। অন্যান্যদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমাদের বেসরকারি খাতকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’
আলোচনা সভায় সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি এইচএন্ডএম, গ্রামীণফোন, এরিকসন, ম্যারিকো, ইউনিলিভার, ভলভো, অ্যাটলাস কপকো এবং স্ক্যানিয়ার মতো বিভিন্ন বেসরকারি খাতের কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছিলেন।
আরও পড়ুন: খুলনা-চট্টগ্রামে জলবায়ু সহনশীল উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত