সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খয়রুল কবীর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একথা জানান। সিভিল সার্জন সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইইডিসিআর-এর রিপোর্টটি পড়ে শোনান।
তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ মৃত মেহেদী হাসান (২৪) নামে একজনের মৃতদেহে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, মৃত ব্যক্তিদের সকলের জ্বর, মাথা-ব্যাথা, বমি ও মস্তিস্কে ইনফেকশনের (এনকেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃতদের মধ্যে একজনের নমুনা নেয়া সম্ভব হয় এবং এতে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে অন্যান্য জীবিত ও সন্দেহভাজন রোগীর রক্তে নিপা ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
তদন্ত দল বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি ও তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে। তারা হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশি ও গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫) মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের জামাতা সদর উপজেলার রুহিয়া থানার কুজিশহর গ্রামের কহিম উদ্দীনে ছেলে হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একই ভাবে আক্রান্ত হয়।
সকাল ৯টার সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাপাতালে তিনি মারা যান। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি আবু তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫) মৃত্যুবরণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে একই রোগে আক্রান্ত হয় আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)। তাদের দুজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউসুফ মারা যায় এবং মেহেদী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে মারা যান।
এরপর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে এলাকার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে এক কি.মি. এলাকায় লোকজনের চলাচল সীমিত করা হয়। সকলকে মুখে মাস্ক পরে চলাচল করতে পরামর্শ দেয়া হয়।
খবর পেয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাঁচজনের একটি তদন্ত দল রোগ সনাক্তকরণের জন্য এখানে আসেন। তারা ১ মার্চ পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল,বালিয়াডাঙ্গী স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। তদন্ত দল ৬৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন ও ৪৫ জনের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে এলাকার লোকদের খেজুরের কাঁচা রস পান থেকে বিরত থাকা ও বাদুর বা অন্য কোন প্রাণির আংশিক খাওয়া ফল না খেতে পরামর্শ দেন।
তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার ও নতুন রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে রাখার ও হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরে সেবা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে অধিকতর তদন্তের জন্য আর একটি তদন্ত দল ৪ মার্চ ঠাকুরগাঁও যাবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে ডা. শাহজাহান নেওয়াজ, ডা. তোজাম্মেল হক, ডা. আজিজুল চপলসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।