দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ড. রাজী প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আলোচনাসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সকালে বনানী কবরস্থানে মরহুমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবে ড. আলীম-আল-রাজী স্মৃতি পরিষদ।
এছাড়া ড. রাজীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ড. আলীম-আল রাজী স্মৃতি পরিষদ, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি, ড. রাজী প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিটি ল’ কলেজ, ঢাকা, নাগরপুর সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইল ও ড. আলীম-আল-রাজী হাইস্কুল, লাউহাটি, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁর পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
সর্বজনশ্রদ্ধেয় ড. রাজী ছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। তিনি একজন মানবতাবাদী, সচেতন রাজনীতিবিদ এবং অনুকরণীয় আদর্শের ধারক। ১৯৬৫ সালে ড. রাজী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর এই তৎপরতার ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানে প্রথমে স্বায়ত্বশাসন ও পরবর্তীতে স্বাধীনতার দাবি, সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়।
ড. রাজী পাকিস্তান এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসন প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরণ লড়ে গেছেন। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী ন্যাপ) এবং পরবর্তীতে তাঁর নিজ দল বাংলাদেশ পিপলস লীগের ব্যানারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ড. রাজী ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থী এবং সামাজিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি নারী অগ্রগতি এবং তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ও তাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের বিপক্ষে ১৯৬৭ সালে দায়ের করা ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় বিবাদীপক্ষের নেতৃস্থানীয় কৌশলি ছিলেন খ্যাতনামা আইনজ্ঞ ড. রাজী। তিনি তার জীবননাশের হুমকিকে উপেক্ষা করে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলা বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের পক্ষে লড়ে গেছেন।
পরোপকারী ড. রাজী সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এবং তার সমস্ত সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন। তিনি তাঁর মূল্যবান বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরিকে দান করে গেছেন। মরহুম ড. আলীম-আল রাজী হতভাগ্য দৃষ্টিহীনদের কথা চিন্তা করে তাঁর মৃত্যুর পর যেন তারই চোখের আলোয় দু’জন অন্ধ এই পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখতে পারে সেজন্য মরণোত্তর চক্ষুদান করে গেছেন। তাঁর চোখের কর্ণিয়া ধারণ করে এখনও পৃথিবীর আলো দেখছেন দু’জন হতদরিদ্র মানুষ। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার সাথে সাথে তারা জীবিকাও নির্বাহ করছেন।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী এবং মহাসচিব ডা মো. জয়নাল ইসলাম দেশে কর্ণিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি হতে বঞ্চিত অসংখ্য হতভাগ্যদের কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে দেশের জনগণকে মরহুমের পদাঙ্ক অনুসরণ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
ড. রাজী শুধুমাত্র মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারই করেননি। তিনি মৃত্যুরে আগে ডায়েরিতে তার অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে দান করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তখন সেই ব্যবস্থা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।