সীমান্তবর্তী দুই দেশের ‘সম্পর্কের টানাপড়েন’ চলছে বলে গণমাধ্যমের প্রকাশিত এ ধরনের ‘অনুমান’ নির্ভর প্রতিবেদনকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একটি বাংলাদেশি গণমাধ্যমের প্রকাশিত নিবন্ধের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গত চার মাসে বৈঠকের জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভারতের হাই কমিশনারকে সময় দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২২ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের জন্য কোনো আবেদনই করা হয়নি।
‘অনুমান-ভিত্তিক’ ওই প্রতিবেদনের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় হাই কমিশনার ২২ জুলাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সাথে দেখা করার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলেন। এর আগে কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাওয়া হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষীক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের এখন ‘সবচেয়ে ভালো সময়’ পার করছে যা আগামী দিনগুলো আরও দৃঢ় হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক এক সূত্র জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত চার মাসে কোনো কূটনীতিকের সাথে সাক্ষাৎ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রটি ইউএনবিকে জানায়, ‘সম্প্রতি নিয়োগের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ৫ জন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে ফিরে গেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদায়ী সাক্ষাতও করতে পারেননি।’
ওই রাষ্ট্রদূতরা হলেন- দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে এবং সুইডেন।
দ্য হিন্দু নামে একটি ভারতীয় দৈনিক দাবি করছে, হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য গত চার মাস ধরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করেও তা পাননি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ক্রমবর্ধমাণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত মধ্যকার বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গত সোমবার ১০টি রেলইঞ্জিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, ভারতীয় রেল, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পিয়ুস গয়াল বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ও এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ড মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশ সোনালী অধ্যায় পার করছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘রক সলিড’ এবং যা মূল্যবোধ, নীতি ও আস্থার ভিত্তিতে তৈরি। রাজনীতি, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি, জ্বালানি, শক্তি, পরিবহন, লজেস্টিক, নিরাপত্তা ও আরও অনেক কিছুসহ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে স্পর্শ করছে।
‘আমি নিশ্চিত সামনের দিনে আমাদের সম্পর্ককে অন্যন্য উচ্চতায় উন্নীত করতে সক্ষম হব,’ বলেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জায়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অংশীদারিত্ব একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ার মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে।
‘ভারত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উন্নয়নের অংশীদার হিসেবেই থাকবে,’ বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।