ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের স্বাস্থ্যক্ষতির হাত থেকে জনসাধারণ ও তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে তামাকের কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে তরুণরা।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়রের (ডরপ) প্রধান কার্যালয়ে ‘তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধিতে যুব সমাজের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তরুণরা এ দাবি জানান।
ডরপের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলামের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে তরুণদের পক্ষ থেকে এনবিআরের প্রতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন ও ধোঁয়াযুক্ত তামাক পণ্যের ক্ষেত্রে নিম্মলিখিত কর প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়।
ধোঁয়াযুক্ত তামাক পণ্য সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রস্তাব-প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরে খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, মধ্যম স্তরে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, উচ্চ স্তরে খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির ক্ষেত্রে খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ।
ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের কর প্রস্তাব-প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ।
প্রস্তাবনায় সিগারেট ও বিড়ির খুচরা মূল্যের উপর বিদ্যমান ১ শতাংশ সারচার্জ ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বহাল রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটিএফকে গ্রান্টস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিঞা বলেন, ‘উল্লেখিত কর প্রস্তাবসহ করারোপ প্রক্রিয়া সহজ করতে তামাকপণ্যের মধ্যে বিদ্যমান বিভাজন যেমন-ফিল্টার বা নন ফিল্টার বিড়ি, সিগারেটের মূল্যস্তর, জর্দা ও গুলের আলাদা খুচরা মূল্য প্রভৃতি তুলে দিতে হবে এবং সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে করজালের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক কর কাঠামো সহজ করা, সুনির্দিষ্ট করারোপ করা ও ৪ স্তর বিশিষ্ট সিগারেট করকে দুটি স্তরে নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘তরুণরা তাদের ইচ্ছাশক্তির বলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। আমি আশা করবো তারা তামাক বিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করবে, তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধির বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সামাজিক অবদান রাখবে এবং জাতীয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তারা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডরপের পরিচালক যোবায়ের হাসান বলেন, ‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ১০ ভাগ তরুণ ধূমপানে আসক্ত। আর এই আসক্তির ফলে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে এবং তাদের কারণে অধূমপায়ীরাও পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত কর পদ্ধতি কার্যকর করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে এবং ধূমপানকারীর সংখ্যা ১৫.১ শতাংশ থেতে ১৪.১ শতাংশে কমে আসবে।’