পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদী ও খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। এসময়ে যে কাজটা আমরা করতে পারব অন্য সময়ে সে কাজটা অনেক ধীর হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, যমুনা নদীটির প্রকৃতিই এমন যে এটি সব সময় ভাঙ্গা-গড়ার মধ্যে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে গণশুনানি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কোন প্রকল্প নেওয়া যাবে তার তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্ট এবং ক্রসবার-৩ এলাকা পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বাজেটের তুলনায় নদীর ভাঙ্গনের প্রবণতা এবং ব্যাপকতা অনেক বেশি। আর তাই আগামীতে যে রিসোর্স বা বাজেট এই মন্ত্রণালয় পাবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেসকল জেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা দরকার সে সকল জেলায় সুষম বণ্টন করা হবে এবং কেউ যেন মনে না করে যে তার এলাকা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: পরিবেশ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, নদীতে যেসব নতুন জায়গা জেগে উঠে সেখানে ভূমিহীনদের জায়গা দেওয়া এবং বনায়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমাদের সকলকে ভাবা উচিত। নদীতে জেগে ওঠা নতুন জায়গায় শিল্প স্থাপন করতে দেওয়া হলে নদী দূষণ হয়।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, গতকালই মন্ত্রণালয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, যে পরিকল্পনাই হোক না কেন বা যে প্রকল্পই হোক না কেন, পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত ঠিকাদারের যা কেনার কথা তা সে কিনছে কিনা, প্রকল্পে যত টাকা লাগার কথা আদৌ তত টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে, নাকি বেশি বাজেট দেওয়া হয়েছে, যে মানের জিনিস দেওয়ার কথা সে মানের জিনিস দেওয়া হচ্ছে কিনা এগুলো নিশ্চিত করার জন্য গতকালই কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন ব্যক্তি বা একজন শিক্ষার্থীকে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর কমিটির প্রধান হবেন সরকারের বাইরের একজন ব্যক্তি।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ‘লৌহজং নদীর ভাঙন হতে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আওতাধীন কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমসসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও যুবকদের অংশগ্রহণে ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে একসঙ্গে ৬৪ জেলায় ৬৪টি খাল/জলাশয় পরিচ্ছন্নকরণ ও দূষণমুক্তকরণ অভিযান শুরু হয়েছে যা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইল সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমানসহ টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: অংশীজনের সহযোগিতায় সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ব: পরিবেশ উপদেষ্টা
আগামী প্রজন্মকে দূষণমুক্ত নদী-খাল দেখাতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা