দেশের বিভিন্ন স্থানে নিঃস্বার্থভাবে সমাজ সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একুশে পদক-২০২৪ বিজয়ী দই বিক্রেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিবেদিতপ্রাণ জিয়াউল হকের আত্মত্যাগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের অনুরোধ করব, প্রতিটি জায়গায় এমন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, যাদের কোনো প্রচার নেই।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ জনকে 'একুশে পদক-২০২৪' প্রদানের পর প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকভাবে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শিক্ষা অর্জন করতে পারেনি, তাদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে জিয়াউল হক তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।
আরও পড়ুন: ২১ বিশিষ্টজনকে একুশে পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
সমাজের উচ্চবিত্তদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'আমরা যারা সমাজের উঁচু স্তরে রয়েছি তাদের দায়িত্ব কারা এত বড় ত্যাগ স্বীকার করছে তাদের খুঁজে বের করা।’
প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানান এবং সমাজের প্রতি তাদের নিষ্ঠার প্রশংসা করেন।
জিয়াউল হাসান সমাজসেবার জন্য একুশে পদক-২০২৪ লাভ করেন। গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা এবং অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণে তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি।
মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে জীবন সংগ্রাম করতে হয়েছে। মহান মানুষ দরিদ্র ছাত্রদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমে একটি পারিবারিক পাঠাগার (১৯৬৯ সালে) এবং পরে ‘জিয়াউল হক কমন লাইব্রেরি’ নামে একটি গণগ্রন্থাগার গড়ে তুলেন।
একুশে পদক সময় জিয়াউল তার পাঠাগারের জন্য স্থায়ী জমি ও ভবন দাবি করেন। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউলের দাবি অনুযায়ী তার গণগ্রন্থাগারের জন্য স্থায়ী জমি ও ভবনের ব্যবস্থা করবেন।
তিনি চাইলে জিয়াউলের প্রতিষ্ঠিত স্কুল জাতীয়করণের উদ্যোগ নেবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সফলভাবে জাতিকে ইতিহাস বিকৃতি থেকে মুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা অন্তত বিকৃত ইতিহাস থেকে জনগণকে মুক্ত করতে পেরেছি। আজ মানুষ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে গেছে।’
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন করার জন্য বঙ্গবন্ধু কারাগারে ছিলেন।
‘কোনো অবদান না থাকলে তিনি কেন জেলে ছিলেন’- এমন প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারই ১৯৭৫-১৯৯৬ সময়কালে হারানো বাংলাদেশের গৌরবময় ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে এই ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্ব দরবারে মর্যাদা সমুন্নত রেখে, মাথা উঁচু করে চলব।’
'অমর একুশে' ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য আশরাফ উদ্দিন আহমেদ (মরণোত্তর) ও মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর) একুশে পদক পাচ্ছেন।
এছাড়া সংগীত ক্যাটগরিতে জালাল উদ্দীন খা (মরণোত্তর), মুক্তিযোদ্ধা কল্যানী ঘোষ (মরণোত্তর), বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শুভ্রদেব; নৃত্যকলা ক্যাটগরিতে শিবলী মোহাম্মদ; অভিনয় ক্যাটগরিতে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীরের হাতে একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়।
আবৃত্তি ক্যাটগরিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালিদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী; চিত্রকলা ক্যাটগরিতে শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিং ক্যাটগরিতে কাওসার চৌধুরী পদকটি পেয়েছেন।
এদিকে, সমাজসেবা বিভাগে মো. জিয়াউল হক, রফিক আহামদ; ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষা বিভাগে অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু এ পুরস্কার পেয়েছেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন: মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরেছে: ওবায়দুল কাদের