শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনে ঘটনায় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর এক বছরের বহিষ্কার আদেশ বাতিল করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নতুন করে শাস্তি আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় বুধবার এ আদেশ দেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে বিশ্বিবিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি এক বছরের জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর বিধান অনুসারে শাস্তির বিষয়ে প্রথম সিদ্ধান্ত নিবেন উপাচার্য। উপাচার্যের শাস্তি যথাযথ হয়েছে কিনা সে ব্যাখ্য-বিশ্লেষণের পর চূড়ান্তভাবে শাস্তি বা সাজা আরোপ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি। শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তে শাস্তি কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু এই পাঁচ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উপাচার্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বিশ্বিবিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটি সরাসরি শাস্তি আরোপ করেছেন। পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু এই বহিষ্কার আদেশটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় তা বাতিল করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নতুন করে শাস্তি বা সাজা আরোপ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
এক বছরের বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে আদালতের বক্তব্য তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে সাজা বা শাস্তি আরো বেশি দেওয়ার সুযোগ আছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলেছে জঘণ্য অপরাধ (ফুরপরীকে নির্যাতন) ঘটেছে, তাই আদালত বলেছেন, সে হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে সাজা আরো বেশি দিতে পারে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনে বলেছে, এক বছরের বহিষ্কারাদেশ সর্বোচ্চ সাজা।’ রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন বলেন, ‘আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান হচ্ছে ছাত্রত্ব বাতিল মানে স্থায়ী বহিষ্কার।
আরও পড়ুন: ইবিতে প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোড অব কন্ডাক্ট অব স্টুডেন্ট,- ১৯৮৭’র প্রথম অধ্যায়ের ৪, ৫ ও ৭ ধারা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮ ধারা সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ তো সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদনে আদালত বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চারঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয় নির্যাতনকারীদের।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানান প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।
আরও পড়ুন: ইবিতে আবারও ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
পাঁচ শিক্ষার্থীর এই বহিষ্কার আদেশ আদালতকে জানাতে প্রতিবেদন দাখিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে প্রতিবেদনটি ১৯ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। রিটকারী আইনজীবী সেদিন বহিষ্কারাদেশ ও শাস্তি বিধিসম্মত হয়নি বলে প্রশ্ন তোলেন। শুনানির পর আদালত কোন প্রক্রিয়ায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চান। সে ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আদালতে উঠলে শুনানির পর আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:ইবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ জন বহিষ্কার