বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার(৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা ও তার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সম্ভাবনার কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক পণ্য আমদানি বৃদ্ধির জন্য ব্রাজিলের সুযোগের কথা তুলে ধরেন। ফলে মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজনীয়তা দূর করে এবং এই প্রক্রিয়াটিকে আরও ব্যয়সাশ্রয়ী করে তোলা যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা ব্রাজিলের পক্ষে প্রচণ্ডভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্রাজিল থেকে প্রচুর পরিমাণে চিনি, সয়াবিন তেল এবং তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বিনিময়ে কেবলমাত্র ন্যূনতম পরিমাণে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে। ব্রাজিলের আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রাজিলের আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে- কেবল আরও বেশি তৈরি পোশাক পণ্য নয়, বরং এতে পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যও অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঐতিহাসিক যোগসূত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের ফুটবলের মান উন্নয়নে সহযোগিতা কামনা করেন।
কূটনৈতিক সদিচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনসিও লুলা দা সিলভার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান।
২০২৪ সালের গ্রুপ অব ২০ (জি২০) শীর্ষ সম্মেলন আগামী ১২-১৪ জুলাই ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে জি-২০ গঠিত। দেশগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়ান ফেডারেশন, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে জি-২০ এর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবে ব্রাজিল।
আরও পড়ুন: মানুষের জন্য কাজ করুন, জনগণের আস্থা হারাবেন না: জনপ্রতিনিধিদেরকে প্রধানমন্ত্রী
বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ভিয়েরা গাজায় চলমান সংঘাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েবাংলাদেশের নিন্দাকে সমর্থন জানান সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে 'তারা (ইসরায়েল) সব ধরনের আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করেছে, তারা হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে হত্যা অব্যাহত রেখেছে- এটি যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা।’
তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী শিশু, নারী ও বৃদ্ধদেরও রেহাই দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে ভিয়েরা বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে ব্রাজিলের আগ্রহ প্রকাশ করেন ভিয়েরা। দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুই জনবহুল দেশের মধ্যে সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ভিয়েরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি উপহার দেন। যা এই সফরে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং সহযোগিতা ও অভিন্ন প্রবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পথ খুঁজে বের করে পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে এটি ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। এটি বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আরও পড়ুন: বহুপক্ষীয় ফোরাম: ২৪ এপ্রিল থেকে ৬ মে থাইল্যান্ড-সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী