সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পটির লক্ষ্য দেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা। নতুন এ সংযোগ থেকে বাংলাদেশে প্রতি সেকেন্ডে ৬ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে।
একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সাপ্তাহিক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং একনেকের অন্য সদস্যরা এনইসি ভবন থেকে যুক্ত ছিলেন।
সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জানান, আজ তিন মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় ২ হাজার ১১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা (এখানে তিন সংশোধিত প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় শুধু যোগ করা) ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৪৪০ কোটি ৮৭ লাখ, সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ এবং বাকি ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংক ও চীনের কাছ থেকে বিদেশি ঋণ হিসেবে আসবে।
পরিকল্পনা কমিশনের আরেক সদস্য মো. মামুন-আল-রশিদ ৬৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পটি সম্পর্কে জানান যে বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপিত হলে দেশের ব্যান্ডউইথ প্রতি সেকেন্ডে ৬ টেরাবাইট বৃদ্ধি পাবে।
তিনি জানান, দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদ ২০২৫ সালে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তাই নতুন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। আর প্রথম ক্যাবলটি ১৫ বছরের পুরোনো হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সেবা বিঘ্নিত হওয়ার হার বেড়েছে।
প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৪ গত ২০০৫ সালে এবং দ্বিতীয়টি সি-মি-উই-৫ ২০১৭ সালে চালু হয়।
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৬ (সি-মি-উই-৬) ক্যাবলে যুক্ত হবে। এটি সিঙ্গাপুর থেকে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগর হয়ে ফ্রান্স পর্যন্ত প্রসারিত থাকবে।
মূল প্রকল্পের মাঝে থাকছে ১৩ হাজার ২৭৫ কিলোমিটারের মূল সাবমেরিন ক্যাবল এবং ১ হাজার ৮৫০ কিলোমিটারের শাখা সাবমেরিন ক্যাবল বসানো।
প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর, বিল ও চরসহ দেশের সব দূরবর্তী এলাকায় সেবা প্রসারিত করতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) নির্দেশ দেন বলে জানান মামুন-আল-রশিদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অঞ্চলের বিটিসিএল কভারেজের বাইরে থাকা উচিত নয়।
দেশে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পটি যথাসময়ে গ্রহণ করায় শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তৃতীয় সাবমেরিন কেবলটি স্থাপিত হলে অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং ভুটানেও রপ্তানি করা যেতে পারে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব।
আজ একনেক বৈঠকে ব্যয় ও সময়সীমা বাড়াতে তিনটি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে।
সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদী, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ পুনঃখনন রয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ৫০০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ৪০৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে ৯০৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুনের পরিবর্তে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর অতিরিক্ত ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সংশোধনীতে করা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনের পরিবর্তে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে অতিরিক্ত ২৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সংশোধনীতে ২ হাজার ৭৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের পরিবর্তে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।