টঙ্গীর মূল ময়দান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের বেলাল মসজিদের কাছে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ মিম্বর থেকে সুবিশাল এ জুমার জামাতের ঈমামতি করেন রাজধানী কাকরাইলের মারকাজ মসজিদের খতিব মাওলানা জোবায়ের হাসান।
এর আগে, বৃহত্তর এ জুমার জামাতে শরিক হতে শুকবার সকাল থেকেই ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা অভিমুখে আসতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যেই মূল ময়দান উপচে জুমার জামাতের পরিসর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইজতেমা ময়দানের পূর্বে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, পশ্চিমে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কসহ আশপাশের সব সড়ক ও মহাসড়কের ওপর মুসল্লিরা জায়নামাজ ও পাটি বিছিয়ে জামাতে দাঁড়িয়ে যান।
এতে করে দুপুর ১টার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের পল্টুন ব্রিজ ও নৌকাতেও জামাত দাঁড়িয়ে যায়। এভাবে জামাতের পরিসর তুরাগ নদ অতিক্রম করে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক ছাপিয়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের আলমে শূরা আশুলিয়া সড়কের পশ্চিম পাশে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ঈমামের মিম্বর স্থানান্তর করা হয়। পরে, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে বেলাল মসজিদ কাছে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ মিম্বর থেকে জুমার জামাতের ঈমামতি করা হয়। টঙ্গীর মূল ময়দান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে এ জুমার জামাতের ঈমামতি করেন কাকরাইল মারকাজ মসজিদের খতিব মাওলানা জোবায়ের হাসান।
তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর স্থাপিত অস্থায়ী ভাসমান সেতু ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসল্লিরা ঈমামের সাথে মূল ময়দানের সংযোগ স্থাপন করেন। সে হিসেবে এবার অধিক মুসল্লির উপস্থিতির কারণে ইজতেমা ময়দান ও তৎসংলগ্ন প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলে-স্থলে জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
অনেকে মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে আশপাশের রাস্তা ঘাট, ফুটপাত খালি জায়গা, ভবনের ছাদসহ বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে জুমার জামাতে শরিক হন। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত শুধু জুমার নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিদের সারি দেখা যায়।
দুপুর পৌনে ২টায় জুমার জামাত শুরু হলে গোটা এলাকায় পিনপতন নিরবতা বিরাজ করে।
ইজতেমায় ৪ জনের মৃত্যু, ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি:
এদিকে, হজের পর মুসল্লিম উম্মার সবচেয়ে বড় জমায়েত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে মুসল্লিরা আসতে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার বিকাল পযর্ন্ত ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে চারজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে, বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় খোকা মিয়া (৬০) নামে একজন মুসল্লি মারা গেছেন। ইজতেমা ময়দানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত ১০টায় টঙ্গী সরকারি হাসপালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহতের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার পাটা গ্রামে। ওই রাতে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার খৈ গ্রামের বৃদ্ধ মুহাম্মদ আলী (৭০) এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার পাইকার বড় বাড়ি গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৫৫) মারা যান। এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ইজতেমা ময়দানের নির্ধারিত খেত্তায় যাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইয়াকুব শিকদার (৭৫) নামের তাবলিগের এক সাথী মারা যান। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালি পাড়া উপজেলার লাখির পাড় গ্রামে।
অন্যদিকে, নওগাঁ জেলা সদরের খলিলুর রহমান নামের অরেক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে স্টোক করলে তাকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে, ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করার সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন যাত্রাবাড়ি থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) ওসমান আলী (৩৫)। প্রথমে তাকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে তাবলিগ সাথী:
অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে বৃহস্পতিবার সর্বস্ব খুইয়েছেন টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আসা দুই মুসল্লি। তারা হলেন-আমির হোসেন (৪৫) ও আলমগীর হোসেন (৫৫)। আমির হোসেনের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুল কাইচ্ছা গ্রামে এবং আলমগীরের বাড়ি একই উপজেলার ছাগলা গ্রামে। তারা ইজতেমা ময়দানের ৪৮ নম্বর খিত্তার ৪৪০ নম্বর খুঁটিতে অবস্থান করছিলেন।
তাদের একজন সাথী নাগর মিয়া জানান, ইজতেমা ময়দানের পাশের এক ভাসমান দোকান থেকে চিড়া কিনে খাওয়ার পরপরই তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।