বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত ‘পুশইন’ কৌশল বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ঢাকায় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার মূল প্রতিপাদ্য ছিল—‘অবৈধ পুশইন বন্ধ এবং সার্বভৌমত্ববিরোধী করিডোর প্রদান রোধ।’
আলোচনা সভায় বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান, কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মফিজুর রহমান, অধ্যাপক এম শাহজান সাজু ও ড. নাসির আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোস্তফা আল ইযায।
কাদের গনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশইন চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবাদ ও চিঠি সত্ত্বেও ভারত সরকার তা কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হলেও সীমান্তে চোরাপথ বা বিজিবির অগোচরে পুশইনের ঘটনা বাড়ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পুশইন নয়, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং অফিস ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে, যা অগ্রহণযোগ্য।’
কাদের গনি অভিযোগ করেন, ‘সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। ফেলানি হত্যাকাণ্ডের কথা সবাই স্মরণ করছে। সীমান্ত দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে দিচ্ছে ভারত। এছাড়া তারা দেশের মাদক ও অস্ত্র সরবরাহেও জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘অন্য দেশের নাগরিক অবৈধভাবে কোনো দেশে প্রবেশ করলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু ভারত কোনো প্রক্রিয়া না মেনে গায়ের জোরে মানুষগুলোকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে, যা বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের গায়েবি অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রচার করছে। এছাড়া বাংলাদেশে তালেবান সরকারের উত্থানসহ নানা অযৌক্তিক খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে।’
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আহ্বানকে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।’
সরকারের মানবিক করিডর প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।’
বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপোস চলবে না। পুশইনের জবাব পুশব্যাক হওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘ভারত আইনবহির্ভূতভাবে পুশইন অব্যাহত রেখেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।’