কোভিড-১৯ মহামারি এবং মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের কারণে প্রত্যাবাসন আলোচনা আপাতত স্থগিত রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার নিয়ে ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার কার্যক্রমও আবার শুরু করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে এ ব্যবস্থায় তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা একটি বড় সমস্যা হয়ে গেছে। আমরা সব ফ্রন্টে যোগাযোগ রাখছি।’
ড. মোমেন বলেন যে জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বাংলাদেশের বন্ধুরা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর নতুন করে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার বারবার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তর করবে, তবে এখনও এ ধরনের স্থানান্তরের কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। ‘তারিখ ঠিক করা হলে আপনারা জানবেন।’
তিনি বলেন, মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে এখনও সরকার পুরোপুরি গঠিত হয়নি। ‘যখন সব দেশ মিয়ানমার সরকারকে (নতুন) স্বীকৃতি দেবে, আমরাও একই কাজ করব।’
করোনা মহামারিতে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবার কোভিড-১৯ সনদ বাধ্যতামূলক। আমরা এ বিষয়ে কঠোর রয়েছি। নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসলেও এখানে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করতে হবে।’
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিভিন্নভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও গত তিন বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে এবং এর সমাধান মিয়ানমারের পক্ষ থেকে করা উচিত।
নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও মিয়ানমার আরও জানিয়েছে যে তাদের পক্ষে কী কী কাজ করা হয়েছে তা নিয়ে একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে তারা এবং রাখাইনের পরিস্থিতি জানাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সে বুকলেট দেয়া হবে।
সাম্প্রতিক টেলিফোনে কথোপকথনের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার তাদের (চীন) আশ্বাস দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দাবি করেছে যে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত আসনে তারা জয়ী হয়েছে।
বাংলাদেশ বলছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগণকে যদি এভাবে পড়ে থাকতে হয় এবং স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ না পায় তবে তারা ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার’ জন্য হুমকির কারণ হয়ে ওঠবে।
মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ‘আস্থার অভাব’ এর মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বরের এবং ২০১৯ সালের আগস্টে করা দু’বারের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।