পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মারসোলো রেবেলো ডি সুজা ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে সম্প্রতি এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রফেসর ইউনূসের সাম্প্রতিক পর্তুগাল সফরকালে গত ১২ মে পর্তুগালের পোর্টো নগরীতে অনুষ্ঠিত ‘সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যান্ড সোসাইটি ফোরাম’ এ তাদের মধ্যে এই একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যান্ড সোসাইটি ফোরামে বিশ্ব নেতারা সকলের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করতে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোর সমাধানে সম্পদ সমাবেশ এবং এই উদ্দেশ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপযুক্ত নীতি-কাঠামো প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে সমবেত হন।
পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট ফোরাম উদ্বোধন উপলক্ষ্যে পোর্টোতে আগমন করেন এবং অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসের ভাষণ শ্রবণ করেন।
তিনি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে একটি বিশেষ মতবিনিময় বৈঠক করতে আগ্রহ প্রকাশ করার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট একটি দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী নির্মাণ এবং দারিদ্র ও দারিদ্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে উপযুক্ত অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মপন্থা গড়ে তোলার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে বিচার চলবে: আপিল বিভাগ
ইউনূস পৃথিবী থেকে দরিদ্র চিরতরে নির্মূল করতে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র দূর করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, দারিদ্র দরিদ্র মানুষদের দ্বারা সৃষ্ট নয়, আমরা যে অর্থনেতিক কাঠামো তৈরি করেছি দারিদ্র তারই সৃষ্টি।
১২ মে পোর্টোতে অনুষ্ঠিত সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যান্ড সোসাইটি ফোরামে প্রফেসর ইউনূস মূল বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন।
ফোরামের মূল বিষয়বস্তু ‘একটি টেকসই ইউরোপ নির্মাণে লক্ষ্য ও নীতিসমূহ’ এর ওপর প্রফেসর ইউনূস ও পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট উভয়েই বক্তব্য রাখেন।
তার বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস মানবীয় মূল্যবোধ-কেন্দ্রিক একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং একটি তিন শূন্য’র পৃথিবী, অর্থাৎ একটি শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, দারিদ্র দূর করতে একটি শূন্য সম্পদ-কেন্দ্রীকরণ এবং প্রতিটি মানুষের ভেতরকার উদ্যোক্তা-শক্তি বিকশিত করার মাধ্যমে একটি শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী গড়ে তুলতে তার ‘তিন শূন্য’র তত্ত্ব বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, মুনাফা ও লোভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা আমাদের এই সভ্যতা একটি নিশ্চিত আত্মহননের পথে এগিয়ে চলেছে। সভ্যতার এই জাহাজ দ্রুত ডুবে যাচ্ছে। এই পৃথিবীতে মানব জাতি তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে তাকে দ্রুত এই ‘তিন শূন্য-ভিত্তিক’ একটি নতুন সভ্যতার জাহাজ নির্মাণ করে তাতে উঠে পড়তে হবে।
তিনি এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন যে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, টিকের থাকার এই পরিবর্তনের জন্য আমাদের সামনে বড়জোর কয়েকটি দশক সময় আছে, কয়েকশ’ বছর নয়।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের পক্ষে ৪০টি নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন কেন: প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন