মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার আল-মদিনা, ক্রিসেন্ট এবং নুরজাহান নামের তিনটি হাসপাতালে বুধবার দিবাগত রাতে এসব অভিযান চালানো হয়।
অভিযান চলাকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহায়তায় এতে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
পরে পলাশ সাংবাকিদের বলেন, গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযানে দেখা যায় যারা এসব হাসপাতাল পরিচালনা করছে তাদের কেউ একেবারেই অশিক্ষিত আবার কেউ টেনে টুনে টেন পাস করলেও পারে এইচএসসি পাস করতে পারেনি। তবুও তারা হাসপাতালে বাসিয়ে রোগী দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতো। আবার কেউ কেউ প্রাথমিকের গন্ডিই পেরোতে পারেনি। তবুও তারাই করছে অপারেশন।
‘ফলে যারা প্রতারিত হয়ে তাদের কাছে আসছে তারা শেষ পর্যন্ত অঙ্গহানির শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরং করছে,’ বলেন তিনি।
পলাশ জানান, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীতে অবস্থিত হাসপাতালগুলোতে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে এসে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার আশ্বাস দেয় দালালরা।
রোগী আনার জন্য দালালরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া। বিশেষ করে অপারেশনের সিরিয়াল পেতে দেরি হবে। ততদিনে রোগী বাঁচবে না ইত্যাদি। ফলে রোগীর স্বজনরাও ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাদের খপ্পরে পড়ে যায়।’
ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বলেন, ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন। বয়স ৫০ এর কোঠায়। তার দাবি, তিনি পড়াশুনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। পাসের সার্টিফিকেট দেখাতে পারেন নি। কিন্তু এই আবুল-ই একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও রোগীদের ভাঙ্গা হাত-পায়ের এক্সেরে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিজেই দেন।
এছাড়াও ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে। যারা বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তারাই বেশি এই সব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, অভিযানের শুরুতেই মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পরিচালক নূর নবীর কোনো ধরনের চিকিৎসা প্রদানের সনদ বা অনুমোদন নেই। তিনি তার রুমে বসে রোগী দেখছে এবং তাদের ব্যবস্থা পত্র দিচ্ছে। হাত ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন গুরুতর আহত যে রোগীরা আসছেন তাদেরকে অপারেশন করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। যা তিনি কোনোভাবেই দিতে পারেন না।
এ অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাসপাতালটির পরিচালক নূর নবীকে এক বছরের কারাদন্ডসহ আনোয়ার হোসেন কালু ও তার সহযোগী আব্দুর রশিদকে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মক্কা-মদিনা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একই অপরাধে নুরজাহান হাসপাতালের মালিক বাবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ওয়ার্ড বয় জাহাঙ্গীরকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।পরে এ হাসপাতালটিও সিলগালা করে দেয়া হয়।