রাজস্ব প্রশাসনকে আধুনিক করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোত্তম পদ্ধতি অনুসরণের দাবি জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
রবিবার (২৫ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিলাম এবং এখনও আছি। তবে সেই সংস্কার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কার্যকর পদ্ধতির আদলে।’
ডেপুটি কমিশনার আব্দুল কাইউম ও ডেপুটি ট্যাক্স কমিশনার রইসুন নেসা যৌথভাবে বিবৃতিটি পাঠ করেন।
বিবৃতিতে এনবিআরের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আলাদা করার সরকারের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়, নতুন অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত দুটি নতুন বিভাগ গঠনের মডেল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে, না কি রাজস্ব বিষয়ে কারিগরি জ্ঞানের অভাব রয়েছে, এমন একটি গোষ্ঠীকে প্রভাবশালী করে তুলবে—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদাহরণ তুলে ধরে ঐক্য পরিষদ জানায়, উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশেই কানাডার সিআরএ, অস্ট্রেলিয়ার এটিও, জাপানের এনটিএ, দক্ষিণ কোরিয়ার এনটিএস, জার্মানির এফসিটিও, যুক্তরাজ্যের এইচএমআরসি, যুক্তরাষ্ট্রের আইআরএসসহ বিভিন্ন স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরাও চাই আমাদের এনবিআর হোক একটি স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান—যা উন্নয়নশীল ও উন্নত অনেক দেশের মতো কার্যকরভাবে রাজস্ব আহরণে সক্ষম হবে। কারণ রাজস্ব হলো দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি।’
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের পূর্ণ কর্মবিরতি
ঐক্য পরিষদ জানতে চেয়েছে, ‘রাজস্ব সংস্কার বা নীতির পৃথকীকরণ প্রসঙ্গে এনবিআর বিলুপ্তির পরামর্শ কি কোনো উন্নয়ন সংস্থা কখনও দিয়েছে? অধ্যাদেশ খসড়া প্রণয়নের সময় কি উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে? কোনো ঋণ চুক্তিতে কি এনবিআর বিলুপ্তির শর্ত ছিল?’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেকোনো নতুন নীতি সংস্থা গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিতে হবে এবং নেতৃত্বে আনতে হবে রাজস্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের।
ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করে, এনবিআর চেয়ারম্যান সংস্কার খসড়া প্রক্রিয়ায় কখনও সহযোগিতা করেননি বরং কর্মকর্তাদের চাওয়া–পাওয়ার বার্তা সরকারে পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন।
তারা বলেন, ‘আগের মেয়াদে তিনি একাধিক অডিট কার্যক্রম বন্ধ করে দেন, যা কর ফাঁকির বড় চিত্র তুলে ধরতে পারত। সম্প্রতি তিনি একতরফাভাবে ভ্যাট হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন।’
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, চেয়ারম্যান এখনো সরকার ও ঐক্য পরিষদের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ বাধাগ্রস্ত করছেন।
‘আমরা বুঝতে পারছি না, সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কেন—আভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা, কারও প্রভাব, না কি অন্য কোনো অজুহাতে?’—বলা হয় বিবৃতিতে।
চার দফা দাবিতে সরকার সাড়া না দেওয়ায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঐক্য পরিষদ।
ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার (২৬ মে) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অধিদপ্তরের অধীন সব দপ্তরে পূর্ণ কর্মবিরতি পালিত হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা ও ওষুধ ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি আমদানি এই ধর্মঘটের বাইরে থাকবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঐক্য পরিষদ বলেছে, অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থনীতি ও রাজস্ব আহরণে বিঘ্ন এড়াতে তাদের দাবির বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে।
সেবা গ্রহণকারীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঐক্য পরিষদ বলেছে, ‘এই স্বল্পমেয়াদি ত্যাগ দেশের ও জনগণের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে। সরকার যদি দাবিগুলো মেনে নেয়, তবে কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সময় দিয়ে পেন্ডিং ফাইল নিষ্পত্তি ও সেবা নিশ্চিত করবেন।’