রাতভর অভিযানের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ মে) সকাল পৌনে ৬টার দিকে দেওভোগের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, সাবেক এ মেয়রকে দেওভোগের ‘চুনকা কুটির’ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় একাধিক থানায় হওয়া অন্তত পাঁচটি মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিনসহ অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্যের একটি দল পশ্চিম দেওভোগে ডা. আইভীর পৈত্রিক বাড়িতে অভিযান চালায়। এরপর রাত ১২টার দিকে সদর থানা, সিদ্দিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার ওসি ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। সে সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য বাড়িটি ঘেরাও করে রাখেন।
পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে আইভীর সমর্থকরা দেওভোগ ও বাবুরাইল এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। এর পরপরই হাজারো সমর্থক আইভীর বাড়ির সামনে জড়ো হন। সে সময় তারা আইভীর পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি বাড়ির প্রবেশপথের দুই রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানগাড়ি ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। এতে পুরো এলাকাজুড়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
অভিযান চলাকালে বাড়ির ভেতরেই ছিলেন আইভী রহমান। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে বলুন, আমি রাতের বেলা বাড়ি ছেড়ে যাব না। আমাকে গ্রেপ্তার করতে হলে দিনের আলোতে করতে হবে।’
রাতভর কর্মী-সমর্থক ও জনতার প্রতিরোধের পর শুক্রবার ভোরের আলো ফুটতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের আগে সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান আইভী। গ্রেপ্তার করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেলেও নিজের বাড়িতেই ছিলেন আইভী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে তাকে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও অপসারণ করা হয়।
সাবেক এই নাসিক মেয়রের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। পুলিশে সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।
সবশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিহত রিকশাচালক তুহিনের স্ত্রী আলেয়া আক্তার মীম বাদী হয়ে ৯৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায়ও তাকে আসামি করা হয়। তার আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মনিরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তার বড় ভাই নাজমুল হকের করা মামলায় ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। ওই হত্যা মামলায়ও শামীম ওসমান ও আইভী দুজনকেই আসামি করা হয়।