মঙ্গলবার নিউইয়র্কের অবস্থিত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে মিয়ানমারের শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে।’
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল অসাইমিন এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম আবদুল আজিজ আল-আসাফ এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, সুইডেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইনস এবং গাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ১১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয়ের আয়োজনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব-অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তারা বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনও চায়।’
এছাড়া তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসাবে এ বছর ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে মোট ২৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে এ অনুষ্ঠানে।
আগামী ডিসেম্বর মাসে সহায়তা প্রতিশ্রুতি প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে জানান ড. মোমেন।
সোমবার জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের দেয়া একটি যৌথ কমিশন গঠনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার।’
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতে চীন সব দিক থেকে কাজ করবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে। ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে শুরু হয় সে ব্যাপারে চীন কাজ করবে এবং আমরা এটি একটি বড় অর্জন মনে করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গত জুলাইয়ে বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সাথে শেখ হাসিনার আলোচনার পরে চীন এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে এ বিষয়টি চীন বুঝতে পেরেছে আর এ কারণেই বেইজিং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ইউএন প্রধান কার্যালয়ে নবনির্বাচিত থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা ও ইনক্লুসিভ ফিনান্স বিষয়ক জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের বিশেষ অ্যাডভোকেট ও নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমার সাথে বৈঠক করেন।
থাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে, তবে কৃষি ভিত্তিক শিল্প বিকাশেও কাজ করতে চায়।
উত্তরে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ কৃষিতে দক্ষতা অর্জন করেছে এবং ব্যাংকক বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চায়।
প্রায়ুথ চান-ওচা আশা করেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন দুই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
কুইন ম্যাক্সিমার সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ডাচ রানী সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।