রোহিঙ্গা
জবাবদিহিই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চাবিকাঠি: ঢাকা
তুরস্ক সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধানের জন্য জবাবদিহি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পাশাপাশি জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টি পুর্নব্যক্ত করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) তুরস্কের আনাতোলিয়ায় ‘আনাতোলিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরাম ২০২৫’ সম্মেলনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম এ এ খানের সঙ্গে বৈঠক করেন হোসেন।
বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার
বৈঠকে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় বাংলাদেশ ও আইসিসির মধ্যকার সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আইসিসির প্রসিকিউটর আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার প্রতি বাংলাদেশের অবিচল অবস্থানের প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোম সনদ ও আইসিসির প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে আইসিসির সঙ্গে বাস্তব সহযোগিতা অন্বেষণে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে।’ রোহিঙ্গা সংকট ও গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আইসিসির অবস্থানেরও প্রশংসা করেন।
আগামী দিনে বিদ্যমান কর্মপ্রচেষ্টার মাত্রা আরও বাড়ানোর বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
৫ দিন আগে
আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
আরাকানে বর্তমানে যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, সেটার নিরসন না করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান। তবে সেই যুদ্ধাবস্থা পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘বিমসটেক বৈঠকের ফাঁকে আমার সঙ্গে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউর আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটা বড় অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমরা ছয়টি কিস্তিতে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা তারা রিভিউ করেছেন। তার মধ্য থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছেন, যারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আর বাকি ৭০ হাজারের ছবি ও নাম নিয়ে কিছু কনফিউশন (বিভ্রান্তি) আছে। সেটা দূর করতে আমরা দুপক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবো।’
‘একইসাথে তারা বলেছেন, বাকি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার রিভিউ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করবেন।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হলেন ড. খলিলুর রহমান
কবে নাগাদ এই এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তো আর কালকেই চলে যাচ্ছেন না। এটার জন্য একটি প্রক্রিয়া দরকার। যেকোনো প্রত্যাবাসনের একটি প্রক্রিয়া লাগে—তারা যাবেন, কী করে যাবেন, সেই জায়গাটা কী অবস্থায় আছে, নিরাপত্তা-সুরক্ষা আছে কিনা এবং যাওয়ার জন্য জীবন-জীবিকার সংস্থান আছে কিনা; কেবল রোহিঙ্গাদের বিষয়ে না, যেকোনো প্রত্যাবাসনে এই ধরনের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।’
‘সব পক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। এই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের কাছ থেকে ভেরিফিকেশন নিতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি মোতাবেক এই ভেরিফিকেশন হয়েছে। মনে রাখতে হবে, রাখাইন এখনো মিয়ানমারের একটি সভরেন (সার্বভৌম) অঞ্চল। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি আরাকান আর্মির সাথে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের একটি প্রিন্সিপাল পজিশন, তারা এটা প্রকাশ্যে সেপ্টেম্বরে বলেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টার এই উচ্চপ্রতিনিধি।
‘সে কারণে আমরা মনে করি, এই এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবো। তবে সেটা কালকেই হচ্ছে না। তারা যাতে দ্রুততর সময়ে যেতে পারেন, আমাদের সেই প্রচেষ্টা থাকবে। সে কারণে মিয়ানমার, আরাকানের বাস্তব কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ ও আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা কাজটি করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে আগামী ঈদ যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে গিয়ে করতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরবেন, সেখানকার ৮০ শতাংশ এলাকা আরাকান আর্মির অধীন। তাদের দেশের মধ্যকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করবে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি। প্রথম কথা হচ্ছে, বিষয়টি (রোহিঙ্গা) মানুষ ভুলেই যাচ্ছিল। জাতিসংঘে মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা গিয়ে বিষয়টি তোলেন। শুধু তা-ই না, জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনি আদায় করে নিয়ে এলেন।’
গেল ১৫ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন, প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান। আমরা গেলাম চীনে, সেখানকার যৌথ বিবৃতিতেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একমাত্র সমাধান বলা হয়েছে। এই যে এই প্রত্যাবাসন ইস্যু হয়েছে। আর কোনো ইস্যু নেই। এছাড়া প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আমরা প্রথমবারের মতো একটি সংখ্যা পেলাম। গেল আট বছরে এই সংখ্যাটা আমাদের কাছে ছিল না। এই প্রথম একটি অ্যাগ্রিড সংখ্যা আমরা পেলাম। আমাদের একটি ভিত্তি হলো।’
‘এখন কথা হচ্ছে, আপনি তো একটি জনগোষ্ঠীকে আগুনের মধ্যে ঠেলে দিতে পারেন না। তার নিরাপত্তা আপনাদের দেখতে হবে। সেখানে গিয়ে তারা যাতে জীবনযাত্রা শুরু করতে পারেন, তার একটি এনবলিং এনভাইরনমেন্ট নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। এটা আমরা একা পারবো না, সবার সঙ্গে আলাপ করে করতে হবে। কাউকে বাদ দিয়ে আমরা এই কাজ করছি না।’
আরাকানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কাজ করছে বাংলাদেশ
আরাকানে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ কাজ করছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি বলেন, ‘আরাকানে যাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দ্রুত ফিরে আসে, সেখানকার মানবিক সংকট, সেটা নিরসনে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি, সেখানকার হিউম্যানিটারিয়ান সিচ্যুয়েশন যাতে আমরা কিছুটা হলেও নিরসন করতে পারি। সে জন্য দরকার বিবদমান দুপক্ষের যুদ্ধের বিরতি।’
‘আমি বলতে পারি, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে হিউম্যানিটারিয়ান সাপোর্ট জাতিসংঘ যেমন দেবে, যেটাতে আমরা সাহায্য করবো—সেই সময়টাতে দুপক্ষের যুদ্ধাবস্থা পরিহার করবে।’
তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে একটি স্থিতির সূচনা হবে বলে আমরা আশা করছি। সেই মুহূর্তটার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। খুব বেশি দেরি নেই সেটার। সেই সময় থেকে আমরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটা বাস্তব আলোচনা করতে পারব।’
আরও পড়ুন: 'খলিলুর রহমান নলেজ সেন্টার' চালু করল বিজিএমইএ
জাতিসংঘের মহসচিব এখানে একটি একটি আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটারিয়ান করিডোরের কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করিডোর কথাটি তিনি বলেননি, চ্যানেল বলেছেন। করিডোরের একটি আইনগত মানে আছে, যে কারণে তিনি এটি অ্যাভয়েড করেছেন। আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই তিনি এটা বলেছেন।’
‘আমি যখন তার সঙ্গে ৭ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে গেলাম, আমাদের পরিকল্পনা—মিয়ানমার, আরাকান আর্মি কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থা—সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করেই আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে গিয়েছি। রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা ও সংকট, সেটা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নেই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র কনড্যুয়িট বা চ্যানেল, যার মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘কারণ রাখাইনের উপকূল এখনো তাতমাদোর দখলে। অন্যান্য জায়গা দিয়ে সহজে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না। আমরা কাজটি এই জনগোষ্ঠীর জন্য করতে চাচ্ছি এই কারণে যে সব মানুষই কিন্তু মানুষ। রাখাইনরা নির্যাতিত হয়েছে, সেটা যেমন খুবই পরিতাপের বিষয়, তেমনই রাখাইন সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন না-খেয়ে আছেন, ওষুধপত্র পাচ্ছেন না, এই যুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, এই যুদ্ধে দুই সম্প্রদায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
‘কাজেই যতটুকু সম্ভব দুই পক্ষকে সাহায্য দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটা কেবল আমাদের না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব। আগামী দিনগুলোতে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না এক্ষেত্রে।’
রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ কাজ করছে বলে যে কথা বলেছেন, এটা কতদূর এগিয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেল ৮ বছরে আমরা অনেক কাজ করিনি। পুরো জিনিসটা একটা ইন্টিগ্রিটেড ইউনিট বলে ধরে নিতে পারেন। আমরা একটা একটা বেছে বেছে করতে পারবো না। পুরো জিনিসটা দেখতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে আরাকানের শান্তিশৃঙ্খলা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শান্তিময় পরিবেশ না হলে একটা যুদ্ধের মধ্যে কাউকে (রোহিঙ্গা) ঠেলে দিতে পারেন না। আমরা বলে আসছি, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা। আমরা কাউকে ঠেলে দেব না। যাওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে আছেন। এটা জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার সফরের সময় দেখেছেন, তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছেন।’
‘মহাসচিব নিজে উদ্যোগ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনারা কী যেতে চাচ্ছেন? তারা সবাই যেতে চেয়েছেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু এই যাওয়াটা যাতে স্বেচ্ছায় হয়। বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা কিংবা স্থিতির অভাব আছে, সেটার নিরসন না করে হচ্ছে না। সেই কাজটা আমাদের করতে হবে। আমরা একাই করছি না, সবাই আমাদের সাথে আছেন। এই ডাইমেনশটা আগে ছিল না। অনেক ডাইমেনশনই ছিল না।’
৮ দিন আগে
প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেবে মিয়ানমার
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য চিহ্নিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কাছে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ এ কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ২০১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই তালিকাটি মিয়ানমারকে দিয়েছিল। এছাড়া, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাইকরণের কাজ চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী ঈদ নিজ দেশে করবে রোহিঙ্গারা, প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, চলমান রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে এই প্রথমবারের মতো কোনো তালিকার বিষয়টি নিশ্চিত করল মিয়ানমার।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাইয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
সাক্ষাৎকালে ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।
১২ দিন আগে
গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী জাতিসংঘ মহাসচিব
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরও বেশি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ যেহেতু উল্লেখযোগ্য একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই আমি আরও বেশি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী।’
শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর এক হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য এক সন্ধিক্ষণ, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আপনাদের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করা।’
বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সংস্কার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে মনে করে জাতিসংঘ: বিএনপি
এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে আমরা একত্রিত হয়েছি। এই সময়ে সংহতি ও মানবতার ওপর গুরুত্বারোপ করা আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
‘এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখব, যাতে আপনারাই সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা ও সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পেরে আমি সম্মানিত। এই রমজান সবার জন্য শান্তি, আশীর্বাদ ও নতুন আশা নিয়ে আসুক।’
৩২ দিন আগে
আগামী ঈদ নিজ দেশে করবে রোহিঙ্গারা, প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার
রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মিয়ানমারে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও অংশগ্রহণ করেন।
রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া গরি সাম্মর বার যেন অনরা নিজর বাড়িত যাইয়ারে ঈদ গরিত পারন।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল নিশ্চিতে সবকিছু করবে জাতিসংঘ: গুতেরেস
৩৩ দিন আগে
জাতিসংঘ মহাসচিবের ইফতার মাহফিলে পদপিষ্ট হয়ে ১ রোহিঙ্গা নিহত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের অংশগ্রহণে লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে পদপিষ্ট হয়ে এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত দুজন।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেলিপ্যাড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোছাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নেয়ামত উল্লাহ ৪ নম্বর ক্যাম্পের মৃত সবি মিয়ার ছেলে। আহতরা ওই ক্যাম্পের আসাদ উল্লাহর ছেলে আসমত উল্লাহ ও বসির আহমেদের ছেলে কলিম উল্লাহ।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আসমত উল্লাহকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ওসি জানান, ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়ে করে পাহাড়ের ঢাল থেকে পড়ে পদপিষ্ট হয়ে তিনজন আহত হন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক নেয়ামতুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন।
৩৩ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল নিশ্চিতে সবকিছু করবে জাতিসংঘ: গুতেরেস
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে সংস্থাটি সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের বালুখালী-১৮ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি যে, এটি (সংকট) এড়াতে আমরা সবকিছু করব এবং তহবিল প্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করতে পারে—এমন সব দেশের সঙ্গে আমি কথা বলে যাব।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে যাবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি জানান, (রোহিঙ্গাদের বিষয়ে) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি সোচ্চার হয়ে কথা বলবেন।
গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জরুরি-ভিত্তিতে আরও সহায়তা প্রয়োজন। (শরণার্থী শিবিরে) এই জনগোষ্ঠীর মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার জন্য এই সহায়তার খুবই প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: সবার টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসংঘকে পাশে পাবে বাংলাদেশ: গুতেরেস
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে শান্তি পুনর্প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারকে সম্মান জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবকিছু করা জরুরি।’
এদিন কক্সবাজারে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন গুতেরেস।
এর আগে, আজ (শুক্রবার) বিকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
সফরের অংশ হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন এবং খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে সঙ্গে নিয়ে উখিয়ায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সবশেষে সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঢাকায় ফেরার কথা তাদের।
৩৩ দিন আগে
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স যোগে তারা কক্সবাজারে পৌঁছান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানান। আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
কক্সবাজার সফরে নির্মাণাধীন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আরও পড়ুন: ব্যস্ত সূচি নিয়ে ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস
৩৩ দিন আগে
‘জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের নজরে আনবে’
বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ১৩ থেকে ১৬ মার্চ নির্ধারিত সফর রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধান খুঁজে বের করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের আগে বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ কথা জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সফর এই সংকটকে বৈশ্বিক নজর কাড়তে সহায়তা করবে। 'আমরা আশা করি জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে একটি ভালো বার্তা দেবেন।’
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সংকট যাতে আবার বিশ্বের নজরে আসে—তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, বৈশ্বিক নজর সেখানেই রয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান চায়, যাতে তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারে। ‘এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
আলম বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার(১৩ মার্চ) বিকাল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ একসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য কক্সবাজারে যাওয়ার আগে শুক্রবার(১৫ মার্চ) সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্ভাব্য রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদনটি 'অসত্য': প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে কমেছে। আশা প্রকাশ করা হচ্ছে, এই সফরটির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের কিছু উপায় খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করা হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা তহবিল সহায়তায় কোনো বিঘ্ন দেখতে চাই না। আমরা তাদের পুষ্টি চাহিদার ঘাটতি করতে চাই না।’
সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে নতুন তহবিল ছাড়া, মাসিক রেশন মাথাপিছু ১২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে মাথাপিছু ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে তাদের জরুরি প্রতিক্রিয়া কার্যক্রমের জন্য তহবিলের গুরুতর ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছে, যা বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা ঝুঁকিতে ফেলেছে।
সকল রোহিঙ্গা সহায়তার রশিদ পায় যার মাধ্যমে ক্যাম্পে নির্ধারিত খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে তাদের পছন্দমতো খাবার নিতে পারে। পূর্ণ রেশন বজায় রাখতে ডব্লিউএফপির জরুরি ভিত্তিতে এপ্রিলের জন্য দেড় কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
আলম বলেন, এই সফর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সামনে রেখে বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ফিনল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও এই আয়োজনের কো-স্পন্সর হিসেবে যোগ দিয়েছে।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় পৌঁছালেও প্রধানত শুক্র ও শনিবার দুটি কর্মদিবস থাকবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা আশা করছেন এক লাখ রোহিঙ্গা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একসঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন।
মিয়ানমারে নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের উদারতার স্বীকৃতি হিসেবে গুতেরেস ও ড. ইউনূস শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও গুতেরেস সকালে (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরবেন।
বার্ষিক রমজান সফরের অংশ হিসেবে গুতেরেস সুশীল সমাজের তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে এক দশকের দীর্ঘ মেয়াদে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাস্তুচ্যুত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে নিয়মিত রমজান পালন করার জন্য সংহতি সফরকে একটি বার্ষিক ঐতিহ্যে পরিণত করেছেন গুতেরস।
গুতেরেস এক বার্তায় বলেন, 'প্রতি রমজানে আমি বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি সফর করি এবং রোজা রাখি। এই মিশন বিশ্বকে ইসলামের আসল চেহারা মনে করিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান করুণা, সহানুভূতি এবং উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। এটি পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ...। আমি সবসময় এই মৌসুমে অসাধারণ শান্তির অনুভূতিতে আরও অনুপ্রাণিত হই।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সম্প্রতি ড. ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে আশা প্রকাশ করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বৈশ্বিক অগ্রাধিকারকে নবায়ন করবে এবং তাদের দুর্দশার বৃহত্তর সমাধানকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করতে তার তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।
তিনি লিখেছেন, 'রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ মিয়ানমারের সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে আমি আমার সদিচ্ছা অব্যাহত রাখব। সেই লক্ষে আঞ্চলিক পক্ষ, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব রাখাইনের জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবিকার সহায়তা কীভাবে সর্বোচ্চ করা যায়—সে বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমগুলোকে দিকনির্দেশনা দিতে তার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের অনুরোধ করেছেন।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সমন্বয়কারী এবং আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারীর সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিখার দেবে। যার মাধ্যমে রাখাইন এবং পুরো মিয়ানমারে অভাবী লোকদের জন্য জরুরি ত্রাণ, নিরাপদ, দ্রুত, টেকসই এবং অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন: মাহফুজ আলম হিযবুত তাহরীরের সদস্য নন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ ব্যবস্থা কীভাবে প্রক্রিয়াটিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করতে পারে—তা বোঝার জন্য আমরা সদস্য রাষ্ট্রের পরামর্শের পরে সম্মেলনের সম্মত ফলাফল এবং পরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
তিনি চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসকে তার চিঠির জন্য ধন্যবাদ জানান। যেটি ৭ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান তার কাছে পৌঁছে দেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সংহতি এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব এবং রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তিনি।
৩৫ দিন আগে
তহবিল না পেলে রোহিঙ্গাদের রেশন অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে: ডব্লিউএফপি
দ্রুত তহবিল পাওয়া না গেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাসিক রেশনের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি—ডব্লিউএফপি। অর্থায়নের অভাবে দেশের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (৭ মার্চ) ডব্লিউএফপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে (রোহিঙ্গাদের) মাসিক রেশন জনপ্রতি ১২.৫ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আর এই সংকট এমন এক সময়ে আসছে, যখন শরণার্থীরা রমজান শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা নির্ধারিত দোকানগুলো থেকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার জন্য ভাউচার পান। তবে পূর্ণ রেশন চালিয়ে যেতে এপ্রিলেই জরুরিভাবে দেড় কোটি ডলার এবং এ বছরের শেষ নাগাদ মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা আরও গভীর সংকটে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের সংঘাত থেকে বাঁচতে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যার সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা ডব্লিউএফপির। পালিয়ে আসা এসব মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজছে, যা ইতোমধ্যে চাপে থাকা সম্পদের ওপর আরও বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির এই সংস্থাটি এরইমধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্ভাব্য রেশন কমানোর বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। আর সেটি করা হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস চলাকালে।
স্ক্যালপেল্লি বলেন, ‘এখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তাই হলো তাদের বাঁচা আর হতাশার মধ্যে পার্থক্য। এই সংকট আরও বাড়তে না দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: ‘নিষেধাজ্ঞা’ সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের ধন্যবাদ
২০২৩ সালে তীব্র তহবিল সংকটের কারণে ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে জনপ্রতি রেশন ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। এর ফলে রোহিঙ্গাদের খাদ্যগ্রহণে ব্যাপক অবনতি ঘটে। এতে করে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা সবচেয়ে খারাপ (১৫ শতাংশেরও বেশি) হয়ে যায়। পরে তহবিল পাওয়ার পর অবশ্য রেশন বাড়ানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু এই জনগোষ্ঠীর কোনো আইনগত অবস্থান নেই, ক্যাম্পের বাইরে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং টেকসই জীবিকার সুযোগও নেই, তাই রেশন আরও কমানো হলে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
পরিবারগুলো বাঁচতে তখন বেপারোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মতো বিশেষত নারীরা শোষণ, পাচার, পতিতাবৃত্তি ও সহিংসতার উচ্চতর ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। শিশুরা স্কুল থেকে বের হয়ে শিশুশ্রমে বাধ্য হবে এবং মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী জনগোষ্ঠী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সাহায্যের ক্ষেত্রে তারাই প্রথম ঘাটতির সম্মুখীন হয়। তহবিলের ঘাটতি ও চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য অনেক সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
৪০ দিন আগে