রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ৯৬ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা ঘোষণা
রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৬ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৬০ মিলিয়ন ডলার ও যুক্তরাজ্য ৩৬ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় অবিচাররের প্রসঙ্গ দিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক। মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান সংকট গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
বেয়ারবক বলেন, ৫০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু একই ধরনের অভিজ্ঞতা বহন করছে। শুধু বাংলাদেশের কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরেই ৮ লাখ শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, ২০২৫ সালের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা এখনো মাত্র ১২ শতাংশ অর্থায়ন পেয়েছে। এটি সবাইকে ‘লজ্জিত’ করার মতো বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সহায়তা বাড়াতে উপস্থিত দেশগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সংকটের কেন্দ্রে রয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা, যাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে, ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে এবং আশ্রয়শিবির কিংবা নির্বাসনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে, আর অসংখ্য মানুষ মিয়ানমারের ভেতরে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সম্মেলনের লক্ষ্য রাজনৈতিক সমাধান: মৌনির সাতৌরি
রোহিঙ্গাকর্মীদের সঙ্গে উদ্যোগে পদক্ষেপ নিতেই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা একত্রিত হয়েছিলেন
এ সময় প্রতিবেদন ও সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরা হয়। যারমধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক নিয়োগ, যৌন সহিংসতা, বিমান হামলা, অনাহার আর গণ-বাস্তুচ্যুতি।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল ফুরিয়ে আসছে বলে সতর্ক করে মানবিক সংস্থাগুলো বলেছে, শরণার্থীরা অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অনেকেই বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রাযর দিকে ঝুঁকছে।
রোহিঙ্গাদের মূল আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অবস্থা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে মানবিক সংস্থাগুলো। সেখানে সাধারণ মানুষজন সেনাবাহিনী ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে বলে মন্তব্য করা হয়।
মানবাধিকার পদদলিত
জাতিসংঘ মহাসচিবের ক্যাবিনেট প্রধান কোর্টনি রাট্রের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের এই সংকট লাখ লাখ মানুষের মানবাধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে পদদলিত করেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
অবিলস্বে ৩টি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সেগুলো হলো—আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর চাপ কমাতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের তবহিল নভেম্বরের মধ্যেই ফুরাবে, বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান ডব্লিউএফপির
বিবৃতিতে জোর দিয়ে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জরুরি পদক্ষেপের দাবি
রোহিঙ্গা কর্মীদের কাছে এই সম্মেলন কেবল সচেতনতা তৈরির সুযোগ নয়, বরং ন্যায়বিচারের দাবি জানানোর একটি মঞ্চ।
মিয়ানমার উইমেনস পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াই ওয়াই নু প্রতিনিধিদের বলেন, ২০১৭ সালে যখন ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে, সেখানে কিন্তু নৃশংসতা শেষ হয়নি বরং আরও ভয়াবহ হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রোহিঙ্গাদের হত্যা, জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ, যৌন সহিংসতা ও অনাহারে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
ওয়াই নু সতর্ক করে বলেন, এখনই কোনো পদক্ষেপ না নিলে ততক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজভূমির বাইরে পাড়ি জমাতেই থাকবে, যতক্ষণ না মিয়ানমারে আর কোনো রোহিঙ্গা অবশিষ্ট থাকে।
তাছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে মানবিক সহায়তা করিডর, লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা ও নৃশংসতার বিচার দাবিও জানান তিনি।
মানবতার জন্য পরীক্ষা
আরাকান ইয়ুথ পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা রফিক হুসন নিজ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জানান, কীভাবে জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলেদের জোর করে সেনা হিসেবে প্রায়শই মানবঢাল বানিয়ে ব্যবহার করেছে। এক সপ্তাহেই অন্তত ৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: টেকসই সমাধানে রোহিঙ্গাদের ক্ষমতায়িত কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ
গ্রাম পোড়ানো, ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসের এক হামলায় একদিনেই ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
হুসন আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাহীনতার এ সংকট নিরসন করা কেবল এই পরিষদের নয়, মানবতারও পরীক্ষা।
এ সময় উত্তর রাখাইনে আন্তর্জাতিক তদারকিতে নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
শান্তির কোনো স্পষ্ট রূপরেখা নেই
জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ বলেন, মিয়ানমারের বহুমাত্রিক সংকট ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কোনো যুদ্ধবিরতি না থাকার কারণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। এ বছর পরবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা বৈধতা নয়, সহিংসতা বাড়াবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
শান্তির কোনো স্পষ্ট রুপরেখা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের জান্তা সরকাররে প্রতি নিন্দা ক্রমশ কমছে, অথচ নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন জুলি।
অবশ্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগ্রত করা গেলে এখনো সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।
সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে বেয়ারবক বলেন, রোহিঙ্গারা আট বছরের দুঃসহ জীবন, বাস্তুচ্যুতি ও অনিশ্চয়তা সহ্য করেছে। তাদের সহনশীলতা বিস্ময়কর। আমাদের প্রতিক্রিয়াও সেই মানের হতে হবে।
এ দিকে শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা কর্মীরা। ওয়াই ওয়াই নু বলেন, ন্যায়বিচার কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। সেটিই একমাত্র প্রতিরোধ, একমাত্র শান্তির পথ।
৬৫ দিন আগে
নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সম্মেলনের লক্ষ্য রাজনৈতিক সমাধান: মৌনির সাতৌরি
আসন্ন নিউইয়র্ক সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি।
সম্প্রতি, ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
মৌনির সাতৌরি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বাস্তুচ্যুত জনগণের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) এই লক্ষ্য সমর্থন করে বলে জানান তিনি।
সাতৌরি বলেন, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে সহায়ক হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক দমনপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বর্তমানে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে শরণার্থী শিবিরগুলোতে অতিরিক্ত ভিড়, সীমিত সম্পদ ও চলমান মানবিক চ্যালেঞ্জের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান
অর্থায়ন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে সাতৌরি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে এখন ইইউ প্রধান দাতায় পরিণত হয়েছে। তবে তহবিল সংকট মোকাবিলায় অন্য দাতাদের, বিশেষ করে আঞ্চলিক দাতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের ভার বাংলাদেশের বহন করা সম্ভব নয়, আবার সেটি স্বাভাবিকও নয়। তবে আপাতত শরণার্থীরা বাংলাদেশেই আছে এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা স্বীকার ও প্রশংসা করার একটি রাজনৈতিক বার্তাও।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রশংসা করি এবং স্বাগত জানাই যে বাংলাদেশ গত আট বছর ধরে দশ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এই বিশাল প্রচেষ্টা অনেক সময় অবহেলিত থেকে গেছে।’
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে সহায়তা করছে ইইউ: রাষ্ট্রদূত মিলার
ইইউ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি অব্যহত রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতিসংঘে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৩০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের প্লেনারি বৈঠক করবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে অংশ নেবেন।
এই বৈঠকের উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখা, বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং একটি কার্যকর, সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রস্তাব করা যাতে টেকসই সমাধানসহ বাস্তুচ্যুত জনগণের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যায়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন অধ্যাপক ইউনূস।
সম্প্রতি কক্সবাজারে ‘স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগ’-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য একটি কার্যকর রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময়।’
পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদ
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব। সমাধান নিয়ে ভাবা এবং বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সবার কর্তব্য।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু ও এর টেকসই সমাধানকে অবশ্যই বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখতে হবে। কারণ তাদের প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত সহায়তার প্রয়োজন থাকবে।
৭৬ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের তবহিল নভেম্বরের মধ্যেই ফুরাবে, বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান ডব্লিউএফপির
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) কার্ল স্কাউ সতর্ক করে বলেছেন, নভেম্বরের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটির তহবিল ফুরিয়ে যাবে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশ্বব্যাপী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তাদের কাজ করার সুযোগ নেই, স্থানীয় সমাজে মেশার সুযোগ নেই, আবার নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রাখাইনেও ফিরে যাওয়াও উপায় নেই। ফলে তারা আমাদের সহায়তার ওপর শতভাগ নির্ভরশীল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, যখন সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা কিংবা কমিয়ে আনা হয়, তখন বাধ্য হয়ে মানুষ নেতিবাচক উপায়ে বেঁচে থাকার পথ খোঁজে।’
ফুরিয়ে আসছে তহবিল
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতার প্রশংসা করেন স্কাউ। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়গুলোতে বিনিয়োগ করি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, তা কক্সবাজারসহ বাংলাদেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয় যাতে এ দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হয়।’
‘কিন্তু আমাদের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। নভেম্বরের পর এই সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো তহবিল আমাদের হাতে নেই।’
এ কারণেই বাংলাদেশের সরকার, অংশীদার, দাতা ও ডব্লিউএফপির মাঠকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশ সফর করছেন বলে জানান সংস্থাটির উপপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘মাসিক ভিত্তিতে আমরা ক্যাম্পের সব মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করি। এটি বন্ধ হলে মানুষ যে শুধু ক্ষুধার কারণেই ভুগবে তা নয়, বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়বে। জীবীকার সন্ধানে অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবেন।’
৯০ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রবিবার (২৪ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র থমাস টমি পিগট এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রাখায় আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এছাড়া বার্মা (মিয়ানমার) থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোকেও ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে।
১০১ দিন আগে
নির্বাচন আয়োজনে দেশ প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এক বছরে দেশ নির্বাচন আয়োজন করার মতো যথেষ্ট প্রস্তুত ও স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গায় নির্বাচিত একটি সরকার দায়িত্ব নেবে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগে’ যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। এক বছর আগে আমরা দেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে ছাত্রদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক হত্যাযজ্ঞের ভেতর দিয়ে গিয়েছি। এখন আমরা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছি। ঠিক এক বছর আগে আমাদের অভ্যুত্থান হয়েছিল, আর দেশ এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।
এ সময় সরকারের প্রতিনিধি, জাতিসংঘ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে। সবাইকে এই সংকট নিরসনে কোনো বিলম্ব ছাড়াই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনাদের সোচ্চার হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আশা জাগাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শুধু বাংলাদেশের একার দায়িত্ব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এখানে এগিয়ে আসতে হবে। সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ভাবা এবং তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সবার যৌথ দায়িত্ব।
পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব
যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরে যেতে না পারেন, তত দিন পর্যন্ত তাদের বিষয়টি ও এর টেকসই সমাধানকে বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখার ওপর জোর দেন অধ্যাপক ইউনূস।
এর আগে, সোমবার সকালে এই সংলাপে যোগ দিতে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। এদিন বেলা ১১টার দিকে তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। এতে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
১০২ দিন আগে
এবার ২১ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিল বিএসএফ
ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন থামছেই না। এবার শেরপুরে নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে রাতের আাঁধারে ২১ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে নাকুগাঁও সীমান্ত এলাকার ১৪১৬ নম্বর সীমানা পিলারের মাঝখানের ৩ নম্বর সীমান্ত গেইট দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
পুশইন করা সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। তাদের মধ্যে ৫ জন বয়স্ক পুরুষ, ৫ জন নারী ও ১১টি শিশু রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদি হাসান।
তিনি জানিয়েছেন, পুশইন হওয়া আটককৃতদের নাকুগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমকিভাবে তারা রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানা গেছে। তাদের বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই এবং পরবর্তী কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভারতের মেঘালয়ের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল গভীর রাতে ২১ জন রোহিঙ্গাকে পুশইন করেন। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের হাতিপাগার বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের আটক করে নাকুগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখেন।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণা সীমান্তে ৩২ জনকে পুশ ইন বিএসএফের
বিজিবি জানিয়েছে, আটককৃতরা ৬টি পরিবারের সদস্য। তারা ২০১৭ সালে কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে যায় এবং সেখানে শ্রমিক হিসেবে হোটেলে ও বাসাবাড়িতে কাজ করতে শুরু করে। এক মাস আগে ভারতীয় পুলিশের অভিযানে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারা কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে ছিল বলে পরিচয় দেয়। ভারতীয় পুলিশ পরে তাদের বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তাদের মেঘালয়ের ডালু সীমান্তে কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পে আনা হয় এবং মধ্যরাতে রাতে নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকার ৩ নম্বর সীমান্ত গেইট দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই একইভাবে নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাতা সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ১০ নারী-পুরুষকে পুশইন করে বিএসএফ।
১৩৩ দিন আগে
তহবিল সংকটে বর্ষায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ
প্রবল বর্ষায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গারা। তহবিল সংকটের কারণে এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে জীবন সবসময়ই কঠিন। তবে, বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। বর্ষার মৌসুমে নানা ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে যেতে হয় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে। ভূমিধস, জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা দুর্ভোগ যেন এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা।
ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের দিয়ে রাস্তা-পাহাড়ি ঢাল মেরামত ও অন্যান্য জরুরি কাজ করিয়ে বিনিময়ে তাদের কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। এতে তাদের সংসার চালাতে কিছুটা হলেও সহায়তা হতো। কেউ কেউ বলছেন, আগে এই আয় দিয়ে পরিবারে বাড়তি খাবার আনা যেত। কিন্তু এখন সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। বৈশ্বিক তহবিল সংকটের কারণে এই কার্যক্রম বন্ধের পথে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, আগে এমন প্রকল্পে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গা কাজ করতেন, এখন সেখানে ৭-৮ জনকেও সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিবিরের রাস্তাঘাট, সেতু, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও টয়লেট মেরামত কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বর্ষাকালে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
ইউএনএইচসিআরের ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তায় অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে শরণার্থী জনগোষ্ঠীগুলোর এর ওপর সরাসরি প্রভাবের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আশ্রয়ের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জীবনের অন্যতম ভরসা
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা জাহিদ আলম নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, আমরা মাসে যে পরিমাণ খাবার পাই, তা খুবই সীমিত। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে যে সামান্য আয় হতো, তা দিয়ে নিজের দুই সন্তানের জন্য বাড়তি কিছু খাবার কিনতে পারতাম। এখন সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না।
পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রদূত তারেক
জাহিদ ও তার স্ত্রী—দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাদের পুষ্টি সহায়তার পাশাপাশি সামাজিকীকরণের সুযোগও তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন তা বন্ধের পথে।
আফরোজা সুলতানা নামের ব্র্যাকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি কেবল একটি কর্মসূচি ছিল না, এটি ছিল তাদের জীবনের অন্যতম ভরসা। এটি শুধু পারিশ্রমিকই দেয়নি, মানুষকে আত্মমর্যাদা দিয়েছে, পরিবার চালানোর সামর্থ্য দিয়েছে এবং ন্যূনতম চাহিদা পূরণের বিকল্প ব্যবস্থাও তৈরি করেছে।’
তিনি জানান, এই কর্মসূচি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোহিঙ্গারা। অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে, কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন, আবার অনেকে বিপজ্জনক পথে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাও করছেন।
অবকাঠামোগত ঝুঁকি
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ সহায়তা তহবিলে ঘাটতির কারণে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে জরুরি অবকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষার সময় সড়ক, সেতু, চলার পথ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
২০২৪ সালের শুরুতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা পাঁচ শতাধিক বেশি অবকাঠামো প্রকল্পে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু চলতি বছর এই কার্যক্রমের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ফলে ভাঙা রাস্তা-সেতু ও বন্ধ ড্রেন এখন শিবিরজুড়ে স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘এসব কারণে শিবিরে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও চলাচল হুমকির মুখে পড়ছে।’
২৪ বছর বয়সী জয়নব বেগম বলেন, ‘আমাদের আশপাশে একটি ল্যাট্রিন, কিন্তু ভূমিধসের ঝুঁকিতে সেটি ব্যবহার করতেও ভয় পাচ্ছি।’
পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
তহবিল সংকটের কারণে শিবিরে অবকাঠামোগত ঝুঁকির পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে আরও রোহিঙ্গা আসায় মানবিক সেবার ওপর চাপ বেড়েছে।
চলতি মাসের ১১ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি সতর্ক করে জানায়, অতিরিক্ত তহবিল পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি, খাদ্য সহায়তা এবং শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম আরও বিঘ্নিত হতে পারে।
এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৩৯ দিন আগে
শরণার্থীদের বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করতে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর: গুতেরেস
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই অধিকাংশ সময় শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। এটি মোটেও উচিত নয় এবং বিষয়টি টেকসইও নয়।’
শুক্রবার (২০ জুন) বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত আট বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যারা মিয়ানমারে সামরিক শাসনের কারণে দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে।
গুতেরেস বলেন, ‘বিশ্ব যখন ব্যর্থ, তখনও শরণার্থীরা অসাধারণ সাহস, সহনশীলতা ও দৃঢ়তা দেখিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, সুযোগ পেলে তারাও অর্থনীতিকে শক্তিশালী, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে সংহতির বিষয়টি কেবল কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এর অর্থ হবে মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের মতো স্থায়ী সমাধানের সম্প্রসারণ এবং আশ্রয়প্রার্থীর অধিকার রক্ষা, যা আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম ভিত্তি।’
‘এ ছাড়াও শরণার্থীদের কথা শোনা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত। আর এর মানে হচ্ছে শিক্ষার সুযোগ, মর্যাদাপূর্ণ কাজ ও সমান অধিকার নিশ্চিত করে দীর্ঘমেয়াদি সংস্থানে বিনিয়োগ।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের দাবি তারেক রহমানের
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘কেউই শরণার্থী হতে চায় না। তবে আমরা কীভাবে সাড়া দেব, সেটি আমাদের সিদ্ধান্ত। তাই আসুন আমরা সংহতির পক্ষে দাঁড়াই। সাহসের পক্ষে দাঁড়াই। মানবতার পক্ষে দাঁড়াই।’
গুতেরেস বলেন, যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দুর্যোগের কারণে শরণার্থী হওয়া লাখো মানুষের প্রতি তারা সম্মান জানাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শরণার্থীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একেকটি গভীর বেদনার গল্প—উচ্ছেদ হওয়া পরিবার ও ভেঙে যাওয়া ভবিষ্যতের গল্প।’
অনেকেই সীমান্তে বন্ধ দরজা ও বর্ণবিদ্বেষের মতো সমস্যার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে জাতিসংঘ আরও মহাসচিব বলেন, ‘সুদান থেকে ইউক্রেন, হাইতি থেকে মিয়ানমার—বেঁচে থাকার জন্য পালিয়ে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা এখন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে, অথচ সহায়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।’
১৬৭ দিন আগে
সীমান্তে ভারতের ‘পুশ ইন‘ সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনক: বিজিবি ডিজি
ভারত তাদের দেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়াকে (পুশ ইন) মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে দাবি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে বিজিবি মহাপরিচালক এ কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে ভারতের পুশ-ইনের ঘটনা সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনক বলেও মন্তব্য করেন বিজিবি ডিজি।
তিনি বলেন, ‘গত ৭ ও ৮ মে দুই দিনে আমরা ২০২ জনকে পেয়েছি। তাদের বিএসএফ বিভিন্নভাবে জনবসতি নেই—এমন সব জায়গায় পুশ-ইন করেছে। আপনারা জানেন, সীমান্তের প্রতিটি জায়গা শারিরীকভাবে দখলে রাখা যায় না। যেসব জায়গায় কেউ ছিলো না, সেখানেই পুশ-ইন করেছে।’
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে ৮১ ভারতীয়কে পুশ-ইন করল বিএসএফ
তাদের নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, ‘আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশনে যাদের বাংলাদেশি পেয়েছি, তারা গত ২ থেকে ৩ বছর মধ্যে এমনকি অনেকে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে নানান কাজে ভারতে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেরই সন্তান-সন্তানদি আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতের আধারকার্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস ছিল। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ সেগুলো রেখে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
পুশ-ইনের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ নিজ এলাকায় ফেরত পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে আটকদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে। তারা আমাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তাদের আমরা ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছি।’
ডিজি বলেন, ‘এরমধ্যে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো কিছু রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে—যারা ভারতের ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন) এর তালিকাভুক্ত শরণার্থী। তাদের আইডি কার্ডও আমাদের কাছে আছে।’
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সামনে ইউএনএইচসিআর-এর পরিচয়পত্রগুলো তুলে ধরেন।
আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকলকে জানাতে চাই, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের শরণার্থী সেখানেই তাদের রাখার দরকার ছিল। আমরা এমন পাঁচজন শরণার্থী পেয়েছি।’
বিএসএফ বরাবরের মতো এ অভিযোগ অস্বীকার করছে জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘তারা (বিএসএফ) বলছেন, এ বিষয়ে তারা জানেন না। হয়তো তারা নিজেই চলে গিয়েছিল ভারতে, হয়তো তারা নিজেরাই ফেরত আসছে–এ ধরনের কথা বলছে। এটা আমরা মানছি না। আমরা পতাকা বৈঠক করে প্রতিবাদ লিপি দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছি৷ তারা যদি বাংলাদেশি হয়—তাহলে আমরা তাদের গ্রহণ করব। তবে সেটি এমন লুকোচুরির মাধ্যমে না হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই করা হবে বলে জানান বিজিবির ডিজি।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি খাগড়াছড়ির দিকে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনের মতো শরণার্থী ওপারে আছে। যাদেরকে বিএসএফ পুশ-ইন করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের টহল বাড়ানোয় ও সীমান্তে সজাগ দৃষ্টি থাকায় গত দুই দিন ধরে তারা চেষ্টা করেও পারছে না।’
ডিডি বলেন, স্থলপথ দিয়ে পুশ-ইন দিতে না পেরে বিএসএফ সুন্দরবনের দুর্গম মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় একটি জাহাজে করে ৭৮ জনকে ফেলে গেছে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে ভারতের পুশ-ইন: সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ ঝাড়লেন রিজভী
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করেছে। তাদের নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আছে। আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি, একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজিবি ডিজি বলেন, ‘মূলত খাগড়াছড়ির বানছগি, জামিনি পাড়া, খেদাছড়া সীমান্ত ও কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারির চর অঞ্চল এবং সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া দিয়ে পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে। বিএসএফ যেসব এলাকায় জনবসতি নাই বা টহল যেতে সময় লাগে সেসব এলাকা টার্গেট করে পুশ-ইনের চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
২০৬ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হলে পুরো অঞ্চলের সমস্যা হবে: তৌহিদ হোসেন
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, ‘যদি ওই সংকটের সমাধান করা না হয়, তাহলে এটা কেবল বাংলাদেশ না, পুরো অঞ্চলের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।’
রবিবার (৪ মে) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এমন কথা বলেন।
রোহিঙ্গারা যাতে প্রত্যাশিত অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে নিজভূমিতে ফিরে যেতে পারেন, সেই উপায় খুঁজে বের করার প্রতি জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা ফিরে যাবেন।’
‘মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, দেশটির অভ্যন্তরে বিভক্তি এবং বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তার অব্যাহত অনুপস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা এখন সুদূরপরাহত,’ যোগ করেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এই সংকটের আমরা এখনো একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে পাইনি। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর দুটি দিক রয়েছে, একটি হলো অধিকার, অন্যটি নিরাপত্তা। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না।’
‘তবে আমরা কোনো অযৌক্তিক প্রত্যাশায় নেই। যে-ই নির্যাতন থেকে তারা বাঁচতে চেয়েছিলেন, আমরা কি তাদের সেই জায়গায় ফেরত পাঠাব,’ প্রশ্ন রাখেন উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান চাইলে মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
তবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দেখছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এ বিষয়ে বাস্তব কোনো ফল আসবে না। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ওপর বাংলাদেশের প্রাথমিক নির্ভরতা ছিল। আমিসহ অনেকেই সতর্ক করেছিলাম যে, এই ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’
‘বছরের পর বছর ধরে চলা দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়াটি নিরর্থক, কেননা একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা যায়নি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘মিয়ানমারে অবশ্যই বাস্তব পরিবর্তন আনতে হবে। সেই পরিবর্তন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে। যদিও এটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ঐক্যবদ্ধ না হলে এটা সম্ভব হবে না।’
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্যান্য বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর থেকে মনোযোগ যেন সরে না যায়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার।’
মিয়ানমারে কখনও গণতন্ত্র ছিল না বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের এই শীর্ষ কূটনীতিক। তিনি বলেন, ‘অং সান সু চির অধীনেও এটি একটি আধা-সামরিক শাসনব্যবস্থা হিসেবে কাজ করেছিল। আমরা এখন যা দেখছি, তা হলো পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ।’
‘মিয়ানমারের এখন মূল অংশীদার সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। যেকোনো স্থায়ী সমাধানে এই তিন পক্ষকেই যুক্ত হতে হবে। বিশেষ করে আরাকান আর্মিকে, যারা এখন রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ করছে,’ বলেন তৌহিদ হোসেন।
২১৪ দিন আগে