এ বছর আলুর ফলন ভালো হলেও অতি বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকার জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের আলু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে আলুতে পচন ধরে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় পচা আলুর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
আলু যা ভালো আছে তা নিয়েও বিপাকে কৃষকরা। আলু তুলে ক্ষেতের মধ্যে স্তুপ করে রাখা হলেও বিক্রির জন্য কোনো পাইকার পাওয়া যাচ্ছে না। আলু চাষ করে লাভবান হওয়ার বদলে এখন কোনো মতে খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা। তাই বাধ্য হয়ে আলু চাষিদের কম মূল্যে বাজারে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
আলু চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তা তুলতে পারবেন কি না তা নিয়েও কৃষকদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। বৃষ্টিতে আলুর ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিফাতুল হোসাইন।
সদর উপজেলার পশ্চিম সোনামুখি গ্রামের আলু চাষি সামসুল হক শিকদার বলেন, ‘আমি এক কানি পাঁচ গন্ডা জমিতে আলু চাষ করেছি। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমার প্রায় ১৫ গন্ডা জমির আলু সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। যা ভালো আছে তা তুলে মাঠের মধ্যে রেখে দিলেও কেনার জন্য কোনো পাইকার আসছেন না।’
চর লক্ষ্মীনারায়ণ এলাকার আয়নাল ওঝা বলেন, ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১ কানি জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে প্রায় অর্ধেক জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে। আলুতে পচন ধরায় কোনো পাইকার আসছেন না আলু কেনার জন্য। ‘আলু চাষ করে আমরা বিপদে আছি। এখন কীভাবে ঋণের বোঝা বহন করব বুঝতে পারছি না।’
একই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক জানান, এ নিয়ে টানা তিন বছর আলু চাষ করে তাদের লোকসান হয়েছে। আলু তোলার সময়ই বৃষ্টি হওয়ায় প্রতি বছর তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা আর আলু চাষ করতে পারবেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শরীয়তপুরে সাড়ে ১৬ শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ১৬ শ ৪৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৩৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন।
সদরের রুদ্রকর ইউনিয়নে ৭৮ হেক্টর, নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়নে ৮৯৫ হেক্টর, জাজিরায় ৩৪ হেক্টর, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটায় ৩৫০ হেক্টর, ডামুড্যায় ২১০ হেক্টর ও গোসাইরহাটে ৭৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।
এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভারী বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আলুর ক্ষতি হয়েছে। এতে ৫ হাজার মন আলু নষ্ট হয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এ জেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫ শ আলু চাষি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, যেসব এলাকায় এঁটেল মাটির নিচু জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছিল সে জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেলে- দোয়াশ মাটিতে আবাদ করা আলু কৃষকরা তুলতে পেরেছেন। আলু দ্রুত তুলে বাজারজাত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
‘জেলায় ৭০ হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়েছে মর্মে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে যাতে আলু চাষের জন্য বেলে-দোয়াশ এলাকা বেছে নেয়া হয় সেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে,’ জানান ওই কর্মকর্তা।