রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ৪০টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনুদান গ্রহণকালে তিনি বলেন, ‘শীতকাল আসন্ন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। তা মোকাবেলার জন্য এ মুহূর্ত থেকেই আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) নেতৃত্বে ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট ১৬৪ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে সকলেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছেন। আর এ জন্যই আমরা এ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার ৯৩৯ জন মারা গেছেন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৬ জনে পৌঁছেছে।
এদিকে, করোনা থেকে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৫ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার এখন পর্যন্ত ৭৩.৫৩ শতাংশ।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) দেয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৩ জনে এবং বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ জনের।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনাভাইরাসের জন্য এখনো কোনও টিকা আবিষ্কার না হলেও বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
‘ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করবে।’
সঠিকভাবে যাচাইবাছাই শেষে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা বিষয়ে ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু ব্যাংক খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বহুবার (ব্যাংকগুলোর) মার্জিং প্রয়োজন। তবে, কোন ব্যাংক সঠিকভাবে কাজ করছে, কোনটা করছে না তা সঠিকভাবে যাচাই করা দরকার। সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখুন মূল্যায়ন না করে এ লক্ষ্যে কিছুই করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রথম বেসরকারি খাতে ব্যাংক খোলার উদ্যোগ নিয়েছে এবং তারা বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন, যার ফলে বিশাল কর্মসংস্থান ও প্রসারিত বাণিজ্য ও ব্যবসা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংক ব্যবহারে অভ্যস্থ করে তোলারও উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তাই, আমরা চাই যে, ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করবে। আপনারা যে সমস্ত যৌক্তিক দাবি আমার সামনে এনেছেন তা আমরা সবসময় বিবেচনা করেছি।’
ব্যাংক পরিচালনায় কোনো সমস্যা থাকলে সরকার তা বিবেচনা করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএবি এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করছে কিনা তা খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন।
ব্যাংক ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিলে অনুদান দিয়েছে তা হলো- খাদ্য মন্ত্রণালয়, ফরেন অফিসার্স স্পাউস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি), বাংলাদেশ জুডিশিয়াল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন এবং মিনিস্টার গ্রুপ। নগদ অর্থ ছাড়াও এক লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়েছে মিনিস্টার গ্রুপ।
অনুদান দেয়া ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হলো- এবি ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক (বিডি) লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি বাণিজ্যিক ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
দেশের যে কোন সংকটে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি) তাদের হাত বাড়িয়ে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদানের মাধ্যমে হাত বাড়িয়ে দেয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।