ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হ্যাকিংয়ের ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ায় এই পদক্ষেপগুলো আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলেছে, আবার কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছে।
সূত্র জানায়, কিছু ব্যাংক তাদের এটিএম বুথ সার্ভিসটি রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত আট ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখছে এবং কেউ কেউ রাত ১২টা থেকে ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এটিএম বুথ, ক্রেডিট কার্ড এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেনের হ্যাক হওয়ার সম্ভাব্য হুমকির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে সতর্ক করে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালাতে পারে বৈশ্বিক মিডিয়া রিপোর্টের পরে এই সতর্কতা জারি করা হয়।’
ব্র্যাক ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট (যোগাযোগ) একরাম কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্ক বার্তার পর তাদের ব্যাংক রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এটিএম বুথের লেনদেন বন্ধ রাখছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের প্রতিটি ডেবিট কার্ডধারীকে এই পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
‘ব্র্যাক ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা টিম ২৪ ঘণ্টা ট্র্যাক এবং নিরীক্ষণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। হ্যাকিংয়ের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ অবিরত করতে হবে,’ বলেন তিনি।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এটিএম বুথের সার্ভিস রাতের পরিস্থিতি সীমিত রেখে আরও কয়েকদিন বাড়ানো হতে পারে।’
গ্রাহকরা দ্বিধায়
একরাম কবিরের কথার সূত্র ধরে অন্যান্য ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা বলেন, সাইবার হামলার ঝুঁকি অব্যাহত থাকায় তারা রাতে এটিএম বুথের লেনদেন স্থগিত রাখতে পারেন।
এটিএম সার্ভিস বন্ধ হওয়ার কারণে অনেক গ্রাহক তাদের চাহিদা মেটাতে টাকা তুলতে না পারায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহক কামরুল হুদা বলেন, ‘হঠাৎ জরুরি পেমেন্টের জন্য আমার অর্থের প্রয়োজন হয়েছে কিন্তু এটিএম থেকে নগদ নেয়া সম্ভব না হওয়ায় আমি পরিশোধ করতে পারিনি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘বিগল বয়েজ’ নামে উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ এটিএম বুথ এবং জাল লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি করার চেষ্টা করছে।
ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা নতুন নয়, হ্যাকাররা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে।
এর মধ্যে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্স আরসিবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়েছিল এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় অবরুদ্ধ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক এখন পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকিগুলো আদায়েরর জন্য আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের একটি আদালতে মামলা করেছে এবং মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।