প্রবল বেগে নদীর জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে প্লাবিত এলাকায় শত শত চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
এদিকে, সুপার সাইক্লোন আম্পানে ভেড়িবাঁধের ধসে পড়া কয়েকটি স্থান গত তিন মাসেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে ধসে পড়া ওইসব বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে গত তিনদিন ধরে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। নদীতে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক স্থানে বাঁধ উপচে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও জোয়ারের পানির চাপে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামজুড়ে থাকা চার শতাধিক চিংড়ি ঘের পানিতে ভেসে গেছে। শত শত বসত বাড়িও প্লাবনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন উপকূলবর্তী গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের নেবুবুনিয়ায় গত ২০ মে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর দমকা হাওয়া বৃষ্টি ও জোয়ারের চাপে তা ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে গাবুরা গ্রাম, নেবুবনিয়া গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম।
তিনি জানান, বেড়িবাঁধের ছয়টি পয়েন্ট ধসে গেছে। এতে সংলগ্ন এলাকার চিংড়ি ঘের ও বসত বাড়ি ছাড়াও ফসলি ক্ষেত পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান অসীম বরন চক্রবর্তী জানান, শ্রীউলা ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে বাঁধ সংস্কারের কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
আশাশুনি শ্রীউলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, নদীর পানির তোড়ে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আম্পানের ৩ মাস পরে পুরনো প্লাবিত এলাকাকে ছাড়িয়ে নতুন এলাকায় পানি ঢুকে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এ ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সবই এখন পানির নিচে। প্রধান সড়কের শ্রীউলা অংশের উপর দিয়ে পানি অপর পাশে প্রবেশ করায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিতেই দিন কাটছে হাজার হাজার মানুষের।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শীত মৌসুমে বাঁধ নির্মাণের জন্য আবার ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ঘরের ভিতরে পানি। রান্নার কোনো জায়গা নেই। এতোদিন রাইসকুকারে কোনোভাবে রান্না করে খাচ্ছিলাম। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা দুইদিন ধরে শুকনা খাবার খাচ্ছি।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুতের আশাশুনি জোনাল অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র কুমার বলেন, কিছু ঘর ভেঙে যাওয়ায় আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর অনুমতিক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কতদিনের মধ্যে আবার সংযোগ চালু হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের মানুষ আম্পানের পর থেকে এখনও বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। গত তিনদিন অস্বাভাবিক জোয়ার ও দমকা হাওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব গ্রামে পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ মারা গেলে দুর্গত এলাকায় কবর দেয়ারও জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও সুধাংশু সরকার জানান, নদীতে এখন তীব্র জোয়ার। প্রায় তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে নয়। আবহাওয়া পরিস্থিতি একটু শান্ত অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না।