এদিকে, উদ্বোধনের দিনই চিড়িয়াখানায় ঢল নামে দর্শনার্থীদের। বিকাল থেকে দলে দলে দর্শনার্থীরা জড়ো হন চিড়িয়াখানায়।
বন বিভাগের মালিকানাধীন নতুন চালু হওয়া এই চিড়িয়াখানার ইজারা নিয়েছে তালহা এন্টারপ্রাইজ।
প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার সুবেদুর রহমান মুন্না বলেন, ‘প্রথম দিনই আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। ৮ থেকে ১০ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছেন। প্রথম দিন হওয়ায় ও দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকায় শুক্রবার আমরা কোনো ফি ছাড়াই চিড়িয়াখানা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেই।’
তিনি জানান, শনিবার থেকে টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হবে। টিকিট ফি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫ টাকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সপ্তাহে সাতদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবুল মোমেন ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে গত মঙ্গলবার গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে সিলেট চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয় দুটি জেব্রাসহ নয় প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে আরও রয়েছে- ২টি হরিণ, ১২টি ময়ূর, ১টি গোল্ডেন ফিজেন্ট পাখি, ৩টি সিলভার ফিজেন্ট পাখি, ৩টি ম্যাকাও পাখি, ৪টি আফ্রিকান গ্রে পেরট, ৪টি সান কানিউর, ৩০টি ছোট লাভ বার্ড ও ১টি অজগর।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহে আরও দুটি হরিণ আসবে। বাঘ নিয়ে আসা হবে ডিসেম্বরে।
সিলেট বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নগরীর টিলাগড়ে শুরু হয় ইকোপার্কের নির্মাণ কাজ। পাহাড়ি টিলা বেষ্টিত ও ঘন সবুজে আচ্ছাদিত ১১২ একর আয়তনের এই ইকোপার্ক তৈরিতে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় হয় এক কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা।
এরপর ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় সিলেটে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। টিলাগড়ের ইকোপার্কে চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য সে বছর ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্ধও দেয়া হয়।
প্রকল্পের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দের প্রায় ১০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয় ৬ কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাকি টাকা ফিরিয়ে নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষে তা সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে চিড়িয়াখানার কাজ শুরুর দিকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্যপ্রাণী কেনা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে- বাঘ, জেব্রা, ময়ূর প্রভৃতি। প্রায় ছয় বছর ধরে এগুলো গাজীপুরের সাফারি পার্কে ছিলে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদকালেই টিলাগড় ইকোপার্কে প্রাণীদের জন্য ১১টি শেডের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে ময়ূর শেড, গন্ডার শেড, হরিণ শেড, হাতি শেড প্রভৃতি।
শেডে থাকা ও বিভিন্ন সময় উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে।