তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে সব সময়ই বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকেছে। দখল ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বহু বছরের সংগ্রামের কারণে বঙ্গবন্ধু আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের বেদনা দৃঢ়ভাবে অনুধাবন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে বক্তব্য রাখেন সেখানেও তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি তার দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ব্যক্ত করেন। ফিলিস্তিনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সেই সমর্থনের ঘোষণার প্রতি আজও বাংলাদেশ অবিচল রয়েছে।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে জর্ডানের আম্মানের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ‘স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন:দেশের নানা আয়োজনে ১৭-২৬ মার্চ যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রিয়াদ আল মালিকি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হওয়া ফিলিস্তিনের জনগণের জন্যও উৎসাহের বিষয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের প্রতি যে ভ্রাতৃত্ববোধ অব্যাহত রেখেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।’
বাংলাদেশের বাস্তবভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন। তা ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত দেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য, প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাত বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমরা এখন খাদ্য ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্ষুধার কারণে এখানে কেউ মারা যায় না।’
তিনি জানান, ২০১০ সাল থেকে ৮০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে এমডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জন করেছে এবং বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘বাংলাদেশ পরবর্তী শতাব্দীতে নিজেকে সর্বাধিক উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস চেষ্টা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইউনেস্কোর পুরস্কারে আমরা গর্বিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান তারকা: তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আম্মান দূতাবাস বছরব্যাপী একাধিক সেমিনারের পরিকল্পনা করেছে। তারই অংশ হিসেবে আয়োজিত প্রথম সিমানারটি নিঃসন্দেহে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বাংলাদেশ সব সময়ই তার সাফল্য ও সমৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোকে সাথে পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাই বাংলাদেশের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আজকের সোনার বাংলা সাফল্য গাঁথার আনন্দঘন উদযাপনে জর্ডান ও ফিলিস্তিনের জনগণকে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অবিসংবাদিত নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের সফল কারিগর। যে সপ্ন এক দিন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তারই সুযোগ্য কন্যা আজ তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক হবে ফিলিস্তিনে
দক্ষিণ আফ্রিকায় চালু হলো ‘বঙ্গবন্ধু কেন্দ্র’
শাহ আলী ফরহাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার মর্মার্থ ব্যাখ্যা করে বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র ও শোষণ মুক্ত যে অসম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনাকে নানা ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির পথ চলাকে যারা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চেয়েছিল তাদের সকল ঘৃণ্য চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে হেটে চলেছে উন্নয়নের মহাসড়কে।
তিনি বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্নের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু দেখতে চেয়েছিলেন তা বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে একই জাতীয়তা বোধ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি স্বপ্নের নাম। বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন রাষ্ট্রের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের কূটনীতিক আদর্শ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টার কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আত্মপ্রত্যয় ও আপন মহিমায় আজ উড়ে চলেছে লাল সবুজের পতাকা।