বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে এই সংকট সমাধানে ঢাকাকে অব্যাহত সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই বোঝা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভাগ করে নিতে পারে।’
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে তুরস্ক: রাষ্ট্রদূত
চাভুসওগ্লু বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং ও মর্যাদার সাথে স্বদেশে (মিয়ানমার) ফিরতে হবে এবং এক্ষেত্রে দুই দেশ (বাংলাদেশ ও তুরস্ক) একসাথে কাজ চালিয়ে যাবে।
প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরিত করে তাদেরকে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘ এবং এর সংস্থাগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করারও পরামর্শ দেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের এই বোঝা ভাগ করে নেয়ার বিষয়ে ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি এখানেও একই সমস্যা দেখেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে।
তবে শুধু প্রশংসামূলক শব্দ নয়, বোঝা ভাগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও বেশি সমর্থন এবং এ বিষয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ চেয়েছেন চাভুসওগ্লু।
আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর, ঢাকায় কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য নির্মাণ করবে তুরস্ক
বোঝা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রশংসামূলক শব্দ শুনতে চাই না।’
রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর সম্পর্কে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এটি তাদের প্রস্তাবের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ যে তারা শরণার্থীদের জন্য আরও ভালো শিবির তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে এবং এ বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান দৃঢ়।
‘তবে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত, উন্নত জীবনযাত্রা তাদের প্রাপ্য’, বলেন চাভুসওগ্লু।
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চরম ভিড় নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে এবং ভূমিধসসহ অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত ঘটনার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে পর্যায়ক্রমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
তদনুসারে, চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে তাদের ইচ্ছার ভিত্তিতে ভাসান চরে স্থানান্তরিত হয়। যদিও কিছু মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তুরস্কের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে চাভুসওগ্লু বলেন, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্ষেত্রে যৌথ উৎপাদন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে আগ্রহী।
‘আমরা সবকিছু উৎপাদন করি না। আমরা আমাদের প্রয়োজনের ৭৫ শতাংশ উৎপাদন করছি,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে বাংলাদেশকে আমরা আরও সহায়তা প্রদান করব।’
তিনি জানান, বাংলাদেশে তুর্কি হাসপাতাল তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং তারা বিভিন্ন মডেলের ওপর কাজ করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের মার্চে উদযাপিত হতে যাওয়া দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় প্রকৃত নেতৃত্ব দেখিয়েছে বাংলাদেশ ও তুরস্ক: তুর্কি রাষ্ট্রদূত
এর আগে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা পরিস্থিতিসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে কারণ বাংলাদেশ ও তুরস্ক দুই দেশই শক্তিশালী বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওপর জোর দিয়ে তাদের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই স্থানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনটি শুরু করেন এবং সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
ড. মোমেনের সাথে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেন চাভুসওগ্লু।
দুই মন্ত্রী যৌথভাবে ঢাকার বারিধারায় তুর্কি দূতাবাসের নবনির্মিত কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওগ্লু।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
বাংলাদেশের সাথে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা বললেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তুরস্ক সফর করেন এবং আঙ্কারায় সদ্য নির্মিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান সম্প্রতি বলেন, তার দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নজর দিচ্ছে কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল।
নিজ কার্যালয়ে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখছি, যার উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। এ দেশটির অর্থনীতি আমাদের মতোই দ্রুত বর্ধনশীল। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রণোদনা দেয়ার কারণে তুর্কি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’
তুরস্কের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) খাতে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানান তুরান।
তুরস্ক ও বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে- দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক ও জনগণের সাথে জনগণের সংযোগ সম্প্রসারণ।
উভয় দেশের মধ্যে বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার।
এছাড়া চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫.৪ কোটি ডলার।