যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে’ স্কুলশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ করেছে।
হৃদয় মন্ডল ক্লাসরুমে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করার পরে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’
সিং বলেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক, যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে।’
আরও পড়ুন: হিন্দুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
তিনি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নির্বিচারে আটক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে অপরাধীকরণ করার ফলে জনগণের মধ্যে উদ্ভূত ভীতি সঞ্চারের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে, একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা।’
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং সেন্টার ফর উইমেন জার্নালিস্টসহ বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ এবং একাডেমিক সংগঠন শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এবং শিক্ষকদের শিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
একইভাবে, সারাদেশে মানবাধিকার রক্ষক, আইনজীবী ও শিক্ষকরা গ্রেপ্তারের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার দ্রুত তদন্তের দাবি অ্যামনেস্টির
সিং বলেছেন, ‘হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে আটক করা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবক্ষয়ের লজ্জাজনক উদাহরণ। এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে মানুষ মুক্তভাবে ও নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে। কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই শিক্ষকরা ক্লাসে কথা বলতে পারবেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এক শিক্ষার্থীর রেকর্ড করা অডিও ফাইল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, বিজ্ঞানের একটি ক্লাসে ‘ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপার’; ‘বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত’-এ নিয়ে কথা বলেছিলেন গ্রেপ্তার ওই শিক্ষক।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংগ্রহ করা অডিও রেকর্ডিংটিতে ওই শিক্ষককে বলতে শোনা যায়,‘ধর্মের কোনো প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷ আর বিজ্ঞান প্রমাণ সাপেক্ষ’।
রেকর্ড করার দুদিন পর ২২ মার্চ স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে জানান, হৃদয় মন্ডলের শাস্তি চেয়ে শিক্ষার্থী ও অন্যরা স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করছে। সেদিনই স্কুলটির একজন অফিস সহকারী হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি। দু’বার তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
পরবর্তী জামিন শুনানি হবে ১০ এপ্রিল।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রী