অন্তর্ববর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠিত গুম সংস্কৃতির সমাপ্তি ঘটাতে এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে সই করেছি। এর মাধ্যমে স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠিত ‘গুম সংস্কৃতি’র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।’
ইউনূস বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করছি। নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষামান পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার; জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার: অধ্যাপক ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বের হয়ে আসছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুমের শিকার ভাইবোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণাগুলো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতে যেন উজ্জ্বল হয় সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: গণ-অভ্যুথানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে: অধ্যাপক ইউনূস
তিনি বলেন, প্রথম মাসে দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপউপাচার্যরা পদত্যাগ করেছেন। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। প্রথম মাসে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন উপাচার্য এবং উপউপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। এর ফলে সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা এরই মধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন, আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণমাধ্যম যাতে কোনো রকম বাধা বিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। এছাড়া আরও যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে, আমরা তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।
আরও পড়ুন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে দিনরাত পরিশ্রম করছি: প্রধান উপদেষ্টা