দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা, বর্ধিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং ঋণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ।
সোমবার (২২ আগস্ট) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ইঙ্গিত দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি বৈঠকের ব্যবস্থা করব। শেষ মুহূর্তে এ ধরনের বৈঠক চূড়ান্ত হয় । এ কারণে এগুলো এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে।
এজেন্ডায় আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন জানান, তিনি যেখানেই যান না কেন তিনি বলেন ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য’ এবং যদি তিনি বৈঠকে উপস্থিত থাকেন, তাহলে তিনি চীনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবেন।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকায় আলোচনা করেন।
মঙ্গলবার সকালে জোহানেসবার্গের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস সংলাপে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং দুই দেশ বেসরকারি খাতের ১৩ বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে মোট ২৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা গত আট বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছি। প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত করা একটি আলোচনার বিষয় হতে পারে।’
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ কম সুদে ঋণ চায়, যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সমস্যা এবং নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন সমস্যা আলোচনায় থাকবে। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগও চাই।’
আরও পড়ুন: ভারতের মতো পরিপক্ক সরকার আঞ্চলিক স্বার্থে কিছু বলতেই পারে: মোমেন
তিনি বলেন, আমরা তাদের বলব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে।
চীনের নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, তাদের বিশেষজ্ঞ, যারা এসব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন তারা বলেন, এটা দেশের জন্য ভালো। ‘তবে আমরা এখনও কথা বলিনি। আমরা এখনও এটিতে সই করিনি।’
মোমেন বলেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলে উভয়ের উন্নয়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মূল নীতি হচ্ছে শান্তি ও স্থিতিশীলতা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রধান লক্ষ্য।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ জোহানেসবার্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চেয়েছে। কারণ উভয় প্রধানমন্ত্রীর সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোমেন বলেন, ‘জোহানেসবার্গে সময় খুবই সীমিত এবং শেষ মুহূর্তে সবকিছু নিশ্চিত করা হয়েছে।’
এমিরেটসের একটি নিয়মিত ফ্লাইট ২২ আগস্ট সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর ফ্লাইটটি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ওআর- টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের একজন মিনিস্টার-ইন-ওয়েটিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার অভ্যর্থনা জানাবেন। যেখান থেকে শেখ হাসিনাকে রেডিসন ব্লু হোটেল স্যান্ডটন জোহানেসবার্গে বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতির প্রশংসায় মার্কিন কংগ্রেসম্যান অ্যান্ড্রু
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন: সাইডলাইন বৈঠকে বসতে পারেন শেখ হাসিনা-মোদি