ভারত সরকারকে ‘অত্যন্ত পরিপক্ক’ হিসেবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নয়াদিল্লি তাদের নিজেদের এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে কিছু বলতেই পারে। যদি এ বিষয়ে তারা কিছু বলেন, তবে এটি অবশ্যই এই অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে।
মোমেন বলেন, ভারত একটি অত্যন্ত শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ এবং সেদেশের সরকার অত্যন্ত পরিপক্ক। তারা (ভারত) তাদের জন্য যা ভালো মনে করে তাই করে। এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি তাদের একটি পরিপক্ক সরকার ব্যবস্থা রয়েছে।
রবিবার (২০ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনন্দবাজার পত্রিকা ও ডয়চে ভেলে বাংলার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা তার মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, হাসিনা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের এবং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত খুশি নয় এবং এই বার্তা ওয়াশিংটনকেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রটি জানিয়েছে।
দুটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরপরই সরকার ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এবং সেখানে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে আগামী মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি বৈঠকের ব্যবস্থা করব। শেষ মুহূর্তে এ ধরনের বৈঠক চূড়ান্ত হয় । এ কারণে এগুলো এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
আরও পড়ুন: কোনো দেশ কি বন্দিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায়: মোমেন
এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সরকার দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত উভয় দেশেই বেশ কয়েকটি বৈঠক করার পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা সীমিত সময় থাকব, যেগুলো সম্ভব আমরা সেসব বৈঠক (সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে) করার চেষ্টা করব এবং বাকিগুলো নয়াদিল্লিতে হতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২২টি দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। পাঁচটি মূল সদস্য দেশ নতুন সদস্যদের নেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এবং ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
মোমেন বলেন, আমরা জানি না কবে নতুন সদস্যরা যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে তারা ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অবস্থান করবেন।
নাম উল্লেখ না করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোদি জোহানেসবার্গে উপস্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে ১৮তম জি-২০ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সারা বছর ধরে অনুষ্ঠিত সব জি-২০ প্রক্রিয়া ও বৈঠকের সমাপ্তি হবে।
নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তিতে জি-২০ নেতরা একটি ঘোষণা দেবেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পর্যায়ের এবং ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের প্রধান আলোচিত বিষয় এবং সেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর নেতাদের প্রতিশ্রুতিগুলো উল্লেখ করা হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এর আগে বলেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য নয়াদিল্লি জোহানেসবার্গের চেয়ে ভালো হবে। বৈঠকের বিষয়ে ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নির্ভর করছে সদস্যদের উপর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন মডেলের প্রশংসা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের