বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমাহারে সাজানো ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হোটেলটি উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি- বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড, প্রায় ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে হোটেলটি নতুন সংস্কার কাজ করেছে। অনেক কারণে ঐতিহাসিক হোটেলটি তার পুরনো নাম ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ নামে আবার আর্বিভূত হয়েছে।
১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করেছিল এ দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’। স্থপতি উইলিয়াম বি ট্যাবলারের নকশার এ হোটেলটি আজো চমৎকার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামেই চলে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত।
এরপর স্টারউড কোম্পানির সাথে চুক্তি হওয়ায় ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। শেরাটনের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে এটি পরিচালিত হয়।
২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলটির মালিক কোম্পানি- বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) প্রাইভেট লিমিটেডের (আইএইজি) সাথে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এটি বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার কাজ শুরু হয়।
রূপসী বাংলা হোটেলে আগে কক্ষ ছিল ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭২টি। সংস্কারের পর এর কক্ষের সংখ্যা কমে ২৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার।
বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে, হোটেলটির বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে আরো অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
হোটেলের অন্যান্য মৌলিক সুবিধার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- মিনিবার, ইলেকট্রনিক নিরাপত্তা ডিপোজিট বাক্স, উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ, ব্যবসা কেন্দ্র, সমস্ত কক্ষে ওয়াইফাই ইন্টারনেট, এক্সিকিউটিভ ক্লাব লাউঞ্জ, উপহারের দোকান, ফিটনেস সেন্টার এবং সুইমিং পুল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে জীবন বাজি রেখে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান আর্নল্ড জেইটলিন, ক্লেয়ার হলিংওর্থ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ডেভিড গ্রিনওয়ে। এসব ছবির মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পেরেছিল বাংলাদেশ কী নৃশংসতার শিকার হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হোটেলটি বাণিজ্যিকভাবে খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।