বুধবার দুপুরে শিশুটির মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ব্যয় নির্বাহের আশ্বাস দেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কুমিল্লা ঝাউতলায় ২৬ সপ্তাহে (প্রায় ৭ মাস) ভূমিষ্ঠ এক অপরিপক্ক শিশুকে বাঁচানোর জন্য মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করান দরিদ্র শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম দম্পতি।
ছয় দিনে প্রায় এক লাখ টাকার বিল দেখে দরিদ্র পরিবার তাদের শিশুকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পালিয়ে যাওয়া বাবা-মার সন্ধানে নামে পুলিশ।
সন্তানকে কেন ফেলে রেখে চলে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুটির মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দিন মজুর। ২০০৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তারপর আমাদের দুটি সন্তান হলেও একটি সন্তানও বাঁচেনি। প্রথম সন্তানটি জন্মের তিন দিন পরেই মারা যায়, দ্বিতীয় সন্তানটি জন্মের দশ দিন পর মারা যায়।’
তিনি বলেন, ‘এবার যখন আমাদের তৃতীয় সন্তানটিও সাত মাসে জন্ম নেয়, তখন আমরা আমাদের সন্তানটিকে বাঁচানোর জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরে হাসপাতালের ছয় দিনে চিকিৎসার বিল এক লাখ টাকার মতো হয়। বিল বেশি হলে আমরা স্বামী স্ত্রী চিন্তায় পরি। দারিদ্রের কারণে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বাচ্চাটিকে রেখে আমরা চলে যাই। এছাড়াও আমাদের সন্তানটি বাঁচবে তাও ভাবতে পারিনি। আমাদের সন্তানটিকে হাসপাতালে রেখে লুকিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি ও আমার স্বামী পুরোটা রাস্তায় কান্না করেছিলাম। তারপর বাড়ি ফিরে আমার স্বামী অনেকটা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আল্লাহ আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সকলের সহযোগিতায় আমি আমার সন্তানটিকে ফিরে পেয়েছি এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
এদিকে হাসপাতালের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউল আলম চৌধুরী এবং হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তানজিদা চৌধুরী সম্পা জানান, গত ১৮ আগস্ট হাসপাতালে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম দম্পতি। এখানে রোকেয়া বেগমের ছেলে সন্তান জন্ম হয়। পরে ২৪ আগস্ট বিকাল বেলা থেকে এই দু’জনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। বাচ্চাটিকে তখন থেকে আমাদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ জানানোর পর বুধবার শিশুটির মা রোকেয়া বেগম সন্তানকে ফিরে পেতে হাসপাতালে আসেন। তবে শিশুটির বাবা শাহ আলম আসেননি।
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, বিষয়টি গণমাধ্যমে জেনে জেলা পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলি। তারপর পুলিশ ওই দম্পতির ঠিকানা খুঁজে বের করেন। শিশুটির মা এসেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় বহন করবো।
পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রের কারণে একটি শিশু সন্তানকে চিকিৎসার খরচ না চালিয়ে বাবা মা হাসপাতাল থেকে চলে যায়। বিষয়টি খুব নাড়া দেয়। আমরা কুমিল্লা পুলিশের কর্মকর্তারা এ শিশুটির চিকিৎসার জন্য একটি ফান্ড গঠন করেছি। শিশুটির চিকিৎসার জন্য এ দম্পতিকে আর ভাবতে হবে না।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান জানান, এমন অপরিপক্ক বয়সের শিশুর চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকহীন শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে সর্বনিম্ন ব্যয়ে চিকিৎসা দেবে শিশুটিকে। সেক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও সকল সহযোগিতা করা হবে।