শিল্পকলা একটি দেশ ও জাতিকে বিশ্ব মানচিত্রে গৌরব ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণে শিল্প-সংস্কৃতি অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। দেশে-দেশে, মানুষে-মানুষে মৈত্রীর বন্ধন ও সম্পর্কের উন্নয়নে শিল্পকলার অবদান ব্যাপক।
শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ১৮তম দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে এসব বলেন রাষ্ট্রপতি।
একাডেমির জাতীয় প্রদর্শনী কেন্দ্রে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে চারুকলার ওপর এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন কেবলমাত্র এশীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি এ আয়োজনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এবারের আয়োজনে বিশ্বের ৬৮টি দেশের অংশগ্রহণ সত্যিই প্রশংসনীয়। এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল আজ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা চারুকলা প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে।’
প্রতিষ্ঠার পর অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আন্তর্জাতিক এ আয়োজন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’
সংস্কৃতিকে জীবনের দর্পণ আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যে জাতির শিল্প-সংস্কৃতি যতবেশি সমৃদ্ধ, সে জাতি ততবেশি উন্নত। ঐতিহ্যগতভাবেই এ দেশের মানুষ শিল্প ও সংস্কৃতিমনা। এ দেশের কবি, গায়ক ও শিল্পীরা অনেকেই দীক্ষা লাভ করেছেন বাংলার অপরূপ প্রকৃতি ও উদার সাংস্কৃতিক চেতনা থেকে। তারা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন মেধা ও মননে এবং তুলে ধরেছেন দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে দেশের শিল্পীসমাজের ভূমিকার কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের শিল্পী সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জাতির যে কোনো প্রয়োজনে বা সংকটময় মুহূর্তে সংস্কৃতিকর্মীরা সবসময় সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।
১৮তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, এই প্রদর্শনী দেশ-বিদেশের শিল্পীদের মধ্যে মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের এক শক্তিশালী ও কার্যকর প্লাটফরম। এ আয়োজন চারুশিল্পের নান্দনিকতায় যোগ করবে নতুন মাত্রা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে টোকিও ইউনিভার্সিটি অব আর্ট-র এমেরিটাস অধ্যাপক তেতসুয়া নোদা এবং সংস্কৃতি সচিব এম নাসিরুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
মাসব্যাপী এই আয়োজনে ৬৮টি দেশের ৪৬৫ জন শিল্পীর ৫৮৩টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হবে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।