মারকুটে টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জ্বরে ভাসছে গোটা দেশ। আর স্মার্ট টিভিতে বিশ্বকাপ দেখা মানে ঘরের মধ্যেই রীতিমতো মিনি স্টেডিয়ামের আমেজ পাওয়া। এইচডি (হাই-ডেফিনিশন) ডিসপ্লে, কালার কন্ট্রাস্ট এবং ডলবি সাউন্ড সিস্টেমে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ব্যাট ও বলের যুদ্ধে দামামা। শুধু কি তাই! নজরকাড়া ভঙ্গিমায় প্রিয় খেলোয়ারের ছক্কা হাকানো বা উইকেট নিয়ে বোলারের উল্লাস নৃত্য স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে স্মার্ট টিভি। বিশ্বকাপের উত্তেজনা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সমান তালে বাড়তে থাকে অত্যাধুনিক এই টিভি কেনার প্রবণতা। এগুলোর মধ্য থেকে সেরাটা বাছাই করতে হলে টিভি সংক্রান্ত কিছু কারিগরি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। চলুন, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি জেনে নেওয়া যাক এ সময়ের মার্কেট কাঁপানো কয়েকটি স্মার্ট টিভির দাম ও ফিচার।
স্মার্ট টিভি কেনার আগে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি
স্ক্রিন সাইজ
টিভি ঠিক কত বড় জায়গায় কত দর্শকের জন্য রাখা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করতে হয় স্ক্রিন সাইজ। খুব ছোট জায়গায় অতিকায় টিভি যেমন অসঙ্গতিপূর্ণ, ঠিক তেমনি বিশাল ড্রইং রুমে ছোট্ট স্ক্রিনে কোনো কিছু ভালোভাবে দেখা যায় না। অবশ্য এখানে বাজেটকেও আমলে আনা আবশ্যক। স্মার্ট টিভির সর্বাধিক জনপ্রিয় মাপগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৪ থেকে ৫৫ ইঞ্চির স্ক্রিন।
ডিসপ্লে
বাংলাদেশে এলইডি এবং কিউএলইডি ডিসপ্লের জনপ্রিয়তার রেশ ধরে নতুন ওএলইডিগুলোও বাজারে বেশ ভালো চলছে। এলইডি (লাইট-এমিটিং ডায়োড) প্রযুক্তির টিভিতে মূলত লাখ লাখ ক্ষুদ্র লাইট অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে টিভির চিত্রগুলো তৈরি করে।
কিউএলইডি (কোয়ান্টাম ডট লাইট এমিটিং ডায়োড) টিভিতে সেই এলইডির ক্ষুদ্র লাইটের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম ডট। এই ডটগুলো এলইডিগুলোর তুলনায় আরও উজ্জ্বল চিত্র তৈরি করে।
আরো পড়ুন: যেসব ভেন্যুতে আয়োজিত হচ্ছে ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ
এরপরেই সব থেকে উন্নত প্রযুক্তির ওএলইডি (অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড) চিত্র প্রদর্শনের ব্যবহার করে ছোট ছোট বিন্দু, যেগুলো সাব-পিক্সেল নামে পরিচিত। সাব-পিক্সেলগুলোর প্রতিটিই স্বাধীনভাবে চিত্র তৈরি করতে সক্ষম। স্বভাবতই ওএলইডিতে বাকি দুটোর তুলনায় সর্বাধিক প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এগুলো বেশ ব্যয়বহুলও বটে। মাঝারি মূল্যের মধ্যে কিউএলইডি সেরা ভিজ্যুয়াল প্রদান করে। ভিডিওর মানের দিক থেকে সবার নিচে এলইডি, আর তাই এগুলোর দাম একটু কম হয়ে থাকে।
রেজ্যুলেশন
সেরা ভিজ্যুয়াল পেতে স্ক্রিন সাইজ ও ডিসপ্লের সঙ্গে যে বৈশিষ্ট্যটির সামঞ্জস্য করতে হয় তা হচ্ছে স্ক্রিন রেজ্যুলেশন। বাংলাদেশে সাধারণত ১ হাজার ৮০পি ও ফোরকে রেজ্যুলেশন বেশি দেখা যায়। অপরদিকে বাজারে এইটকে-এর প্রবেশটা অনেকটা ধীর গতির। কারণ এখন পর্যন্ত এত উচ্চ রেজ্যুলেশনের চলচ্চিত্র বা কন্টেন্টের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তাছাড়া এগুলোর দামও আকাশচুম্বী।
তবে মার্কেট সবচেয়ে বেশি দখলে রয়েছে ফোরকে বা আল্ট্রা এইচডি স্ক্রিনগুলোর। কেননা অধিকাংশ স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলো ফোরকে’তেই কন্টেন্ট দিচ্ছে। গুণগত মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকলেও ১ হাজার ৮০পি বা ফুল এইচডিগুলো এখনও টিকে আছে।
রিফ্রেশ রেট
একটি দৃশ্যের প্রতিটি সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম উপাদান কত নিখুঁতভাবে প্রদর্শিত হবে তার একটা নিত্যতা হচ্ছে রিফ্রেশ রেট। প্রতি সেকেন্ডে রিফ্রেশের পুনরাবৃত্তিকে হার্ট্জ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ফোরকে স্মার্ট টিভির জন্য একটি আদর্শ রিফ্রেশ রেট হল ৬০ হার্ট্জ। এর অর্থ হচ্ছে- প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার ছবি রিফ্রেশের মাধ্যমে স্ক্রিনটি মসৃণ দৃশ্য প্রদর্শন করতে পারে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে বিশদ চর্চার কারণে এখন অনেকেই ৫০ বা ৬০ হার্ট্জ এবং আগের ৩০ বা ৪০ হার্টজের পার্থক্য ধরতে পারেন। ক্রিকেট খেলায় কোনো উইকেট যাওয়ার সময় ৪০ হার্টজের তুলনায় ৬০ হার্টজে প্রতিটি দৃশ্য সুক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্য করা যায়।
আরো পড়ুন: দামি ফ্ল্যাগশিপ ফোন কেনার সুবিধা-অসুবিধা
এইচডিআর সাপোর্ট
ছবির উজ্জ্বল এবং অন্ধকার অংশের মধ্যে অধিকতর স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য ধরা পড়ে এইচডিআর (হাই ডাইনামিক রেঞ্জ)-এর মাধ্যমে। এতে করে ছায়াতে কিংবা অন্ধকারে এবং অধিক সূর্যালোকে ঘটা দৃশ্যগুলো স্বাভাবিক দৃশ্যের মতোই ভালোভাবে বোঝা যায়।
শুধু তাই নয়, এইচডিআর-এর রঙের ভারসাম্যতার জন্য দৃশ্যে থাকা বিভিন্ন খুটিনাটি বস্তুর উপর আলাদা ভাবে ফোকাস করা যায়। এরকম আলো-আধারীর দৃশ্যগুলো দেখার ক্ষেত্রে এইচডিআর না থাকা টিভিগুলোতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়।
অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগ সুবিধা
একের সঙ্গে দুই বা ততোধিক ডিভাইসের সংযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও বেশি উন্নত হয়ে ওঠে এলইডি টিভি। এইচডিএমআই ও ইউএসবি পোর্ট, ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ ব্যবস্থা গেমিং কন্সোল, বাহ্যিক সাউন্ড সিস্টেম এবং কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগের সুবিধা দেয়। পূর্বে শুধু বাহ্যিক স্পিকার সংযোগ করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল এই সংযোগ বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মোবাইল ডিভাইস সংযুক্ত করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনকি অতিরিক্ত পাওয়ার অ্যাডাপ্টারেরও প্রয়োজন পড়ে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, অল্প অল্প করে এমন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি টিভির দামটাও বাড়তে থাকে।
আরো পড়ুন: আপনার মোবাইলটি অবৈধ নয়তো? অফিসিয়াল ফোন যাচাই করার উপায়
বিল্ট-ইন সাউন্ড সিস্টেম
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারী সিআরটি মনিটরের জায়গায় স্থান পেয়েছে এলইডি স্ক্রিন। টিভির এই ওজন কমার সঙ্গে ভিজ্যুয়াল কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই; কিন্তু ক্ষতি হয়েছে সাউন্ড সিস্টেমের দিক থেকে। এখন সাধারণত ডিসপ্লের ফিজিক্যাল ফ্রেমের ভেতরে সাদামাটা স্পিকার দেওয়া হয়। এতে করে টিভি দেখার অভাবনীয় অভিজ্ঞতার কাছে শোনার অভিজ্ঞতা নিছক নগণ্য বনে যায়।
বিশেষ করে মিউজিক সাউন্ডট্র্যাক এবং মুভি সাউন্ড এফেক্টগুলো ভালোভাবে বোঝা যায় না। তাই টিভি কেনার সময় সাউন্ড সিস্টেমের দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ।
ন্যূনতম ডলবি অডিও হলে প্রাথমিকভাবে আলাদা করে স্পিকার লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না। আর বিল্ট-ইন ডলবি ডিজিটাল প্লাস সম্পূর্ণ না হলেও এর বর্ধিত সাউন্ড ঘর জুড়ে কিছুটা হোম থিয়েটারের আমেজ দিবে।
উন্নত প্রযুক্তি
এখন স্মার্ট টিভি মানেই পুরোদস্তুর একটি কম্পিউটার, যেখানে আছে অপারেটিং সিস্টেম, আভ্যন্তরীণ অ্যাপ এবং ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিষেবা। বর্তমানে ভয়েস কন্ট্রোল বৈশিষ্ট্যও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে গ্রাহকদের মাঝে। এছাড়া ফেসবুক ব্রাউজের পাশাপাশি নেটফ্লিক্স মুভি স্ট্রিমিং এখনকার অ্যান্ড্রয়েড টিভিগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য।