গ্লোবাল সাউথে (উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে) মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার ও প্রাপ্যতা বিষয়ে আফটারঅ্যাকসেস গবেষণার অংশ হিসেবে এ তথ্যগুলো উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই গবেষণার বাংলাদেশ অংশের তথ্যগুলো প্রকাশ করে আঞ্চলিক আইসিটি পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক- লার্নএশিয়া।
আফটারঅ্যাকসেস সমীক্ষায় বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার ও প্রাপ্যতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র ডিজি (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগ. জেন. মুস্তফা কামাল, গ্রামীণফোনের সিইও মিকায়েল ফোলে, রবির সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরির প্রধান তৈমুর রহমান, লার্নএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান উপস্থিত ছিলেন।
এশিয়া বিভাগের প্রধান গবেষক ও লার্নএশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিলানি গালপায়া বলেন, ‘মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট এখন সর্বব্যাপী হয়ে উঠছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং এর ব্যবহার বিষয়ে তথ্য সরকার এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে তথ্য এখনো অপ্রতুল। কারণ প্রাপ্ত তথ্যগুলো এ সংক্রান্ত ব্যবসা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সরবরাহ করা অথবা এসব তথ্য রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করছে না। মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং ব্যবহারকারী সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থা হচ্ছে এর ব্যবহারকারী (এবং ব্যবহারকারী নন) এমন ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা বলা। এই গবেষণায় আমরা সেই কাজটিই করেছি।’
এ গবেষণায় বাংলাদেশের ৪০টি জেলার ১০০টি ওয়ার্ড এবং গ্রামে ২ হাজার পরিবার ও ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। গবেষণা পদ্ধতিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা টার্গেট গ্রুপ (১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী) জনসংখ্যার ৯৫ ভাগ প্রতিনিধিত্বমূলক এবং এতে সম্ভাব্য ত্রুটির মাত্রা +/-৩.৩ শতাংশ।
বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার ১৮টি দেশে একই গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
‘এই গবেষণা প্রতিবেদনটি টেলিকম খাতের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেছে এবং এতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের যে বৈষম্য রয়েছে, সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে,’ বলেন লার্নএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান।
তিনি বলেন, এই গবেষণায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনার দিকটিও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।
আগামীতে নীতি নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ এবং এই শিল্পখাতের সিদ্ধান্ত প্রণয়নে এই তথ্যগুলো ব্যবহারের তাগিদ দেন তিনি।
১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, তারা ইন্টারনেট ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, ইন্টারনেট কী সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। এই তথ্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ইন্টারনেট এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি), কানাডা, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (এসআইডিএ) এবং যুক্তরাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) থেকে পাওয়া অনুদানের মাধ্যমে আফটারঅ্যাকসেস গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসা বাংলাদেশ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য হচ্ছে:
• বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মোবাইল ফোনের মালিকানার ব্যবধান (৭ শতাংশ) এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার যে দেশগুলোতে জরিপ চালানো হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম।
• গ্রামাঞ্চলে বাস করা ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষ শহরের একই বয়সের মানুষের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
• যতগুলো দেশে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী-পুরুষের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। ১৫ থেকে ৬৫ বয়সের পুরুষদের তুলনায় একই বয়সের ৩৪ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে এবং ৬২ শতাংশ কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
• যতগুলো দেশে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ২৭ শতাংশই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে।
• ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক-চতুর্থাংশেরও কম অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। যারা এ সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাদের মধ্যেও এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম।