গত ১০ নভেম্বর বুধবার নেটফ্লিক্স মুক্তি দিল ভারতীয় ওয়েব সিরিজ ‘ডিকাপল্ড’-এর প্রথম ট্রেলার। ট্রেলারে গভীর হিউমারের নিদারুণ গল্পের সাথে বিশেষত্ব পেয়েছে আর্য চরিত্রে মাধবনের আবির্ভাব। এই প্রথমবারের মত স্পষ্টভাষী এবং আপোসহীন অনুভূতি সম্পন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন থ্রি-ইডিয়টের ‘ফারহান’ নামে খ্যাত এই অভিনেতা। সরলতা, আড়ম্বর ব্যক্তিত্ব এবং আনুগত্য; এতদিন এগুলোই ছিল তার চরিত্রের মূল দিক। তার ভক্তরাও তাকে সেভাবেই দেখতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে নেটফ্লিক্স শো ‘ডিকাপল্ড’-এ এক অন্য মাধবনকে দেখবে দর্শকরা। চলুন, নতুন ওয়েব সিরিজটির ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ ‘ডিকাপল্ড’-এর গল্প
একজন পেশাজীবী লেখক আর্য ও তার স্ত্রী শ্রুতি একটি পার্টি আয়োজন করে তাদের ডিভোর্সের ব্যাপারটা আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানোর জন্য। কিন্তু ক্রমশ এই বিচ্ছেদ এক অদ্ভূত সম্পর্কে রূপ নিতে থাকে। ছোট ছোট দাম্পত্য কলহগুলোর মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ মতাদর্শগুলো উঠে আসে। সামনে বা পেছনে লোকে যাই বলুক না কেন, সব কিছুকে ছাপিয়ে স্রোতের বিপরীতে নিজেদের মেলে ধরতে তারা বদ্ধ পরিকর। এরপরেও ভারি কিছু হাস্যরসের দৌলতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার ছিটে ফোটা অনাবৃত হতে থাকে, যেখানে তাদের দুজনেরই অজুহাত তাদের একমাত্র মেয়ে।
এরকমই এক চিত্রনাট্য ধরে এগিয়ে গেছে ‘ডিকাপল্ড’-এর গল্প, যেখানে কাহিনীর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে চরিত্রগুলোর মিথস্ক্রিয়া।
আরও পড়ুন: এবার হংকংয়ের ‘নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড‘ জিতলো রেহানা মরিয়ম নূর
‘ডিকাপল্ড’ নির্মাণ ও নির্মাতার কথা
ওয়েব সিরিজটির গল্প লিখেছেন ভারতীয় সাপ্তাহিক ইংরেজি ম্যাগাজিন ‘ওপেন’-এর সাবেক সম্পাদক মানু জোসেফ। ২০২০ সালের নেওয়াজউদ্দিন অভিনীত সিনেমা ‘সিরিয়াস ম্যান’ তাঁর রচিত একই নামের উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছিল। উপন্যাসটি ২০১০ সালে ভারতের স্বনামধন্য পত্রিকা ‘দ্যা হিন্দু’-এর রিভিউয়ে সেরা কথাসাহিত্য পুরস্কার জিতেছিল।
‘ডিকাপল্ড’ নেটফ্লিক্স শোটির পরিচালনায় আছেন ভারতের তরুণ লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হার্দিক মেহতা। বলিউডে হার্দিকের ক্যারিয়ার শুরু হয় নামকরা চলচ্চিত্র মৌসম (২০১১), লুটেরা (২০১৩) এবং কুইন (২০১৩)-এর স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার হিসেবে। তার নির্দেশিত প্রথম মুভি ‘কামিয়াব’ বুশান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পেয়েছিল ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে তা ২০২০ সাল থেকে ভারতের প্রেক্ষাগৃহেও দেখানো হয়। মেহতা ২০২০ সালের অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর ওয়েব সিরিজ ‘পাতাল লোক’-এর দুটি এপিসোডের চিত্রনাট্য লিখেছেন। তার শর্ট ডকুমেন্টারি ‘আমদাভাদ মা ফেইমাস’ সেরা নন-ফিচার ফিল্ম হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশে ও বিদেশে একাধিক পুরস্কার অর্জন করে।
‘ডিকাপল্ড’ সিরিজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে আন্দোলন ফিল্মস, বোম্বে ফেবল্স মোশন পিকচার্স এবং বোম্বে ফেবল্স মোশন পিকচার্স।
আরও পড়ুন: রেড নোটিশ: নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল মুভি
‘ডিকাপল্ড’-এর অভিনেতা-অভিনেত্রী
ওয়েব সিরিজটির প্রধান দুটি চরিত্রের একটি- আর্য ভূমিকায় থাকবেন মাধবন। একরোখা, স্পষ্টবাদী এবং বিবাহের ব্যাপারে তথাকথিত রীতি বিবর্জিত মতাদর্শী আর্য চরিত্রে সাবলীলভাবে দেখা যাবে মাধবনকে। তামিল সিনেমা মাধ্যমে অভিষেক ঘটা এই অভিনেতা অনেকগুলো ব্যবসা সফল সিনেমার নায়ক। তার মধ্যে রাং দে বাসান্তি (২০০৬), গুরু (২০০৭) এবং থ্রি-ইডিয়ট (২০০৯) ভারতের সর্বকালের সেরা উপার্জনকারী চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছিল। জনপ্রিয় এই তারকার অর্জনে আছে শ্রেষ্ঠ নতুন অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
সেরা অভিনেতার বিভাগে তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার জন্য আন্তর্জাতিক তামিল চলচ্চিত্র পুরস্কার।
মাধবনের বিপরীতে শ্রুতির ভূমিকায় থাকছেন ভারতের নৃত্যশিল্পী এবং ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রী সুর্ভিন চাওলা। বিভিন্ন ভারতীয় টিভি সিরিয়ালে বেশ পরিচিত মুখ সুর্ভিনের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে কন্নড় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের বহুল সমাদৃত নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ ‘সেইক্রেড গেমস’-এ তিনি অভিনয় করেছেন। ২০১৫ সালের মুভি ‘পার্চ্ড’-এ অভিনয়ের জন্য লস এঞ্জেলেসের ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি রাধিকা আপ্তে, তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জি এবং লেহার খান-এর সাথে যুগ্মভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
‘ডিকাপল্ড’ সিরিজে আরো অভিনয় করেছেন অতুল কুমার, নবনীত সিং কোহলি, হিমানি ভাটিয়া এবং শ্রেষ্ঠা ব্যানার্জি।
আরও পড়ুন: ‘রোহিঙ্গা’: মুক্তির অপেক্ষায় ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের বাংলা ফিচার ফিল্ম
পরিশিষ্ট
মাধবনের নতুন চরিত্র দেখার পাশাপাশি দর্শকরা ‘ডিকাপল্ড’ ওয়েব সিরিজে দারুণ কিছু হাস্যরসের সম্মুখীন হবে। সুগভীর হিউমারের মোড়কে চিরাচরিত জীবন ধারণের বৈপরীত্য ধারাবাহিকটিকে উপভোগ্য করে তুলবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ওটিটি মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটা স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি হওয়া ভারতীয় কন্টেন্টের ধারা বজায় রেখে এই সিরিজটিও চিত্রনাট্য পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনতে পারে।