রূপালী পর্দার প্রিয় মুখ থেকে শুরু করে মানবসেবার তরে সামাজিক মূল্যবোধের স্তম্ভগুলোকে মজবুত করতে নারী নেতৃত্ব তৈরির এক অভিজাত মঞ্চ মিস ইউনিভার্স। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি দর্শকের উল্লাসিত দৃষ্টিপটে আনন্দের এক মহোৎসবে পরিণত হয় এই প্রিয়দর্শিনীদের মিলনমেলা। ২০২১ এর এই মৌসুমটি ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য একটু আলাদা। কারণ এবার মিস ইউনিভার্স ২০২১ খেতাব জিতেছেন একজন ভারতীয় কন্যা;হারনাজ সান্ধু। চলুন, তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মিস ইউনিভার্স ২০২১ এর আদ্যোপান্ত

২০২১ এর ১২ ডিসেম্বর বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার ৭০-তম আসরটি অনুষ্ঠিত হলো। ভেন্যু ছিলো ইসরায়েলের ইলা’র ইউনিভার্স ডোম। আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান টিভি ও রেডিও পরিবেশক স্টিভ হার্ভে। এ নিয়ে তিনি মোট ছয়বার মিস ইউনিভার্স উপস্থাপনা করলেন।পুরো ইভেন্টটি সম্প্রচারিত হয়েছিলো হলিউডের স্বনামধন্য সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান ফক্স-এর ব্যানারে।

প্রতিযোগিতার জন্য মোট ৮০টি দেশের প্রতিযোগীরা নির্বাচিত হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫৩ জন ছিলেন তাদের স্ব স্ব দেশে জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী। আর বাকি ২৭ জন ছিলেন তাদের নিজ নিজ দেশের জাতীয় পর্যায়ের রানার আপ বা কাস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত।

আরও পড়ুন: মিস ইউনিভার্স হলেন ভারতের হারনাজ সান্ধু

এই ৮০ জন থেকে শীর্ষ ১৬ বাছাই করা হয়। এখান থেকে ১০ জন পরের রাউন্ডের মঞ্চ লাভ করে। অতঃপর এই ১০ থেকে ৫ জনকে রেখে এগিয়ে যায় সুন্দরী প্রতিযোগিতা। অবশেষে সেই বাকি ৫ জন-ই ১ম স্থানের জন্য পরস্পরের সাথে যুদ্ধে নামে। ফলস্বরূপ পাওয়া যায়, ১ম ও ২য় রানার আপ এবং বিজয়ীকে।

ইভেন্টের শেষে উত্তরসূরি হিসেবে ভারতের হারনাজ সান্ধুকে মুকুট পরিয়ে দেন মেক্সিকোর আন্দ্রেয়া মেজা। এটি দীর্ঘ ২১ বছর পর ভারতের প্রথম জয় এবং মিস ইউনিভার্স ইতিহাসে তৃতীয়বার। প্রথমবার ভারতীয় বিশ্বসুন্দরী ছিলেন সুস্মিতা সেন ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০০০ সালে লারা দত্ত।

ব্যক্তি জীবনে একজন হারনাজ সান্ধু

পুরো নাম হারনাজ কর সান্ধু; জন্ম ২০০০ সালের ৩ মার্চ পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার বাটালা শহরের নিকটবর্তী কোহালি গ্রামে। বাবা প্রীতমপাল সিং সান্ধু এবং মা রবিন্দর কৌর সান্ধু। বাবা একজন রিয়েলটর এবং মা পেশায় একজন গাইনোকোলজিস্ট। বড় ভাই হারনুর।

সান্ধুর বেড়ে ওঠা চণ্ডীগড়ে একটি জাট শিখ পরিবারে। সেখানে তিনি শিবালিক পাবলিক স্কুল এবং স্নাতকোত্তর গভর্নমেন্ট কলেজ ফর গার্লস-এ পড়াশোনা করেন। মিস ইউনিভার্স হওয়ার আগে সান্ধু জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিচ্ছিলেন।

সান্ধু প্রতিযোগিতায় নামেন কৈশোরেই। মিস চণ্ডীগড় ২০১৭ এবং মিস ম্যাক্স ইমার্জিং স্টার ইন্ডিয়া ২০১৮-এর মতো খেতাব জিতেন। ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া পাঞ্জাব ২০১৯ এর খেতাব জেতার পর সান্ধু ফেমিনা মিস ইন্ডিয়াতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যেখানে তিনি ফেমিনা মিসের সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে স্থান পান। সান্ধু মিস ডিভা ইউনিভার্স ২০২১-এর মুকুটও পেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ইভ্যালির প্রতারণা: মিথিলা ও শবনম ফারিয়াকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন

হারনাজ সান্ধু’র মিস ইউনিভার্স জয়ের নেপথ্যে

একটি গোলাপী স্বর্ণাভে অলঙ্কৃত লেহেঙ্গা পরে ভারতের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের ছাতা বহন করে মিস ইউনিভার্স ২০২১ এর মঞ্চে জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন চণ্ডীগড়ের মেয়ে হারনাজ সান্ধু। লেহেঙ্গাটি ডিজাইন করেছেন অভিনব মিশ্র এবং ছাতাটি বানিয়েছেন রেজা শরিফী।

তার পরিধেয়ে ফুটে উঠেছিলো একজন ভারতীয় সম্রাজ্ঞীর রাজকীয় গাম্ভীর্য, যা একজন নারীর প্রতিরক্ষার প্রবৃত্তির প্রতীক। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ২১ বছরের মেয়ে হারনাজের অভিব্যক্তিতে সরবে উপস্থিত ছিলো অকৃত্রিম আত্মবিঃশ্বাস।

মিস ইউনিভার্স ২০২১ তার পারফরম্যান্সকে উৎসর্গ করেছেন সেই সমস্ত শক্তিশালী নারীদের, যারা প্রতিদিন হাসিমুখে বিভিন্ন ভাবে জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি হন।

তার মতে, এ প্রজন্মের তরুণীদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। কিন্তু এই আত্মবিঃশ্বাসই পারে হাজার মানুষের ভীড়ে নিজেকে অনন্য করে তুলতে এবং এটিই সৌন্দর্য্যের মূল উৎস। অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা না করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারীদের কথা বলতে হবে।

নিজের স্বপক্ষে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়ে সান্ধু নিজেকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেন। তার অদম্য আত্মবিঃশ্বাসই বিজয়ীর মুকুট মাথায় মিস ইউনিভার্স ২০২১ এর মঞ্চে দাড়িয়ে থাকার কারণ।

আরও পড়ুন: অবশেষে বিয়ে করলেন ক্যাটরিনা-ভিকি

পরিশিষ্ট

মিস ইউনিভার্স হারনাজ সান্ধু কিন্তু ক্যামেরায় সামনে একেবারে নতুন মুখ নন। তিনি পূর্বে কয়েকটি পাঞ্জাবি ছবিতে কাজ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘ইয়ারা দিয়ান পু বারান’ এবং এখনও মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘বাই জি কুত্তাঙ্গে’। তিনি কালারস চ্যানেলে চলমান টিভি সিরিজ ‘উদরিয়ান’-এর মাধ্যমে টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সিরিজটির একটি পর্বে তাকে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা যায়। তিনি সেখানে মুল চরিত্র জেসমিন (ইশা মালভিয়া)-এর প্রতিযোগী হিসেবে ছিলেন। এপিসোডের ক্লিপটি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।