আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্টের আয়োজন মানে বাড়তি এক উন্মাদনা থাকে তরুণদের মধ্যে। বলা যায়, এই প্রাঙ্গণে সঙ্গীতের যে কোনো আয়োজন বেশ সফল। ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) এখানে বসে কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয়বারের আসর। যা প্রথমবারের চেয়ে আরো বেশি আলোচনায় আসে।

কোক স্টুডিও বাংলার এবারের আসরে দু’টি ভাগে পারফর্ম করেন ১০০ শিল্পী। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় মূল কনসার্ট। তবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে দর্শকদের জন্য গেট খুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু এবারের কনসার্ট নিয়ে তরুণদের মধ্যে আগ্রহটা বেশিই ছিল তাই দর্শকদের সংখ্যাটাও ছিল অতিরিক্ত। আর এজন্য বেশ ভোগান্তিও তৈরি হয়।

ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি দর্শক আসে এবারের কোক স্টুডিও কনসার্টে। অনেক দর্শকের অভিযোগ, ঠিকমতো দাঁড়িয়ে কনসার্ট উপভোগ করার অবস্থা ছিল না সেখানে। তবে এর মধ্যে সময় উপভোগের চেষ্টায় ছিলেন সবাই। সব ভুলে সুরের মূর্ছনায় মেতে ছিলেন পুরোটা সময়।

এবারের কনসার্টটির লাইনআপে ছিলেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব, অনিমেষ রায়, পান্থ কানাই, মমতাজ বেগম, মিজান রহমান, ঋতু রাজ, সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা, নিগার সুলতানা সুমি, জালালি সেট, রিপন কুমার সরকার (বগা), সুনিধি নায়েক, সৌম্যদীপ শিকদার (মুর্শিদাবাদী), কানিজ খন্দকার মিতু, মো. মাখন মিয়া, রুবাইয়াত রেহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস আকবর, শানিলা ইসলাম, আরমীন মুসা ও ঘাসফড়িং কয়্যার, রিয়াদ হাসান, পল্লব ভাই, মেঘদল, জহুরা বাউল, সোহানা (ডটার অব কোস্টাল), মুকুল মজুমদার ঈশান, প্রীতম হাসান, ইসলাম উদ্দিন পালাকার, ফজলু মাঝি, ইমন চৌধুরী, এরফান মৃধা শিবলু, আলেয়া বেগম, ফুয়াদ আল মুক্তাদির, বাপ্পা মজুমদার ও হামিদা বানুসহ দুই সিজনের শিল্পীরা।

এছাড়া এবারের কনসার্টে বিশেষ অতিথি ছিলেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এলিটা করিম, শুভ (ডি রকস্টার), আনিকা ও অনুরাধা মণ্ডল। ব্যান্ড পারফরম্যান্স দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করতে ছিল আর্টসেল, হাতিরপুল সেশনস ও লালন ব্যান্ড।

মঞ্চে উঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা। সেখানে গণমাধ্যমে কোক স্টুডিও বাংলার সংগীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব বলেন, ‘‌কোক স্টুডিও বাংলা সবসময়ই নতুন কিছু করার, বাংলা সংগীতকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে এসেছে। ভক্তদের সরাসরি সে অনন্য সুরের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। যে পরিমাণ ভক্তরা কনসার্টে উপস্থিত হয়েছেন, আর যে ভালোবাসা তারা আমাদের দেখিয়েছেন, এতে আমরা সত্যি খুবই আনন্দিত। এ ভালোবাসা ভক্তদের জন্য আরো নতুন কিছু নিয়ে আসতে আমাদের উৎসাহিত করবে।’

মূল আয়োজন শুরুর আগে মঞ্চে উঠেন উপস্থাপক ও জনপ্রিয় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আমিন হান্নান চৌধুরী এবং জুনায়েদ রাব্বানী। দর্শকদের অপেক্ষার সময়টা শিথিল হয় কিছু্টা। বেশ উপভোগও করেন সবাই। এরপর কোক স্টুডিও বাংলা'র গানের সঙ্গে বিশেষ একটি পরিবেশনায় অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

দুপুর শেষে বিকাল তখন। কনসার্ট প্রাঙ্গণে তখন দর্শকদের ভিড় বাড়ছে। মঞ্চে তখন উঠল ব্যান্ডদল হাতিরপুল সেশনস। ‘সেই পাখিটা’ দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা। একে একে শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো শোনান তারা।

ব্যান্ডদল হাতিরপুল সেশনস পরিবেশনা যখন শেষ হয় ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আর শেষ হলো দর্শকদের অন্তিম অপেক্ষা। ‘নাসেক নাসেক’ গানটি দিয়ে শুরু করে কোক স্টুডিও বাংলার এই কনসার্টের মূল পর্ব।

একে একে সকল শিল্পী তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসেন। এর মধ্যে শায়ান চৌধুরী অর্ণব ও সুনিধি নায়েক মঞ্চে আসতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে দর্শক-শ্রোতা। মুখরিত হয়ে উঠে পুরো প্রাঙ্গণ। তাদের কণ্ঠে ‘সন্ধ্যাতারা’ গানটির সঙ্গে পুরো আর্মি স্টেডিয়ামের দর্শক-শ্রোতা গুণগুণ করতে থাকে। এক ক্ল্যাসিক্যাল আবহ তৈরি হয়।

কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজনে আরও ছিল নৃত্যপরিচালক ও নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ এবং শামীম আরা নীপা'র পরিচালনায় নৃত্যাঞ্চল নৃত্য দল এবং ম্যাশমাহবুব ‘কোরিওগ্রাফি’র অসাধারণ নৃত্য।

কনসার্টে চমক হিসেবে আরা ছিল লালন ব্যান্ড এবং আর্টসেলের দুর্দান্ত পরিবেশনা। যা শ্রোতাদের মাঝে বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করে। আর এবারের আসর শেষ হয় ‘দেওড়া’ দিয়ে।