বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ গ্রিনহাউজের নেতৃত্বে রয়েছেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান।
সুনামগঞ্জের নিমজ্জমান এলাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের লবাণাক্ত জমিতে দেশের প্রধান খাদ্য শস্য ধানের চাষ সাম্প্রতিক সময় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানসহ স্বল্প জমিতে ব্যাপক উৎপাদনের লক্ষ্যে ধানের বিশেষভাবে নির্দিষ্ট জিন পরিবর্তন করে চাষাবাদ বাড়াতে জিইবি বিভাগ এই ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউস স্থাপন করছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় উচ্চ ফলনশীল ‘খেজুর ছড়া’ ধানের জাতের সন্ধান
জৈব প্রযুক্তিতে আধুনিক এক পদ্ধতি জিন প্রকৌশল। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের জিন সংস্কারের পর তা সীমাবদ্ধ রাখতে ও অভ্যস্থতা তৈরির জন্য মাঠ পর্যায় নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আবদ্ধ অবস্থায় ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউসের মতো স্থাপনা ব্যবহার করা হয়।
সিলেট অঞ্চলের প্রথম এ ট্রান্সজেনিক ল্যাবটি জিইবি বিভাগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগসহ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যাবে। এই গ্রিনহাউসটি নতুন জাতের উদ্ভিদের কারণে পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি হওয়া রোধ এবং উদ্ভিদকে অভ্যস্থ করতে উপকারী ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় শাবিপ্রবি শীর্ষে
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা চলছে উদ্বোধনের।
পিএইচডি গবেষক নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি গবেষণায় ব্যবহৃত উদ্ভিদকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচর্যা করতে হয়, যার জন্য গ্রিনহাউস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। আমাদের বিভাগের সূচনালগ্ন থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হওয়া সত্ত্বেও গ্রিনহাউস না থাকায় গবেষণার ফলাফল মাঠ পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রতিষ্ঠিত এই আধুনিক গ্রিনহাউস ব্যবহার করে গবেষণায় লব্ধ ফলাফলকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষা, গবেষণার মান আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করুন: শিক্ষামন্ত্রী
জিইবি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান বলেন, ‘আমাদের ছোট দেশে ধান উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ধানের মাঝে আমরা যদি ভিটামিন এ যোগ করতে পারি তাহলে ভাতের সাথে ভিটামিন এ পাওয়া যাবে। আর এগুলো যুক্ত করতেই এই ট্রান্সজেনিক মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়। এই ধরনের গবেষণা আমাদের মতো ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যার জন্য করতেই হবে।’
তিনি জানান, জিএম (জিন সংস্কার) ফসলের ওপর বেশিরভাগ গবেষণা উন্নত দেশ মূলত উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপে করা হয়েছে। তবে এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশও জিন প্রকৌশলে সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পাইপলাইনে বেশ কয়েকটি পণ্য রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে জৈববিজ্ঞান সংস্থাগুলো কৃষিতে জিএম প্রযুক্তির প্রয়োগকে প্রাধান্য দিয়েছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষা ও গবেষণায় শাবিপ্রবি রোল মডেল: উপাচার্য
জিইবি বিভাগের প্রশংসা করে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তত্ত্বাবধানে করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবটি মহামারির সময়ে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে।’
তিনি ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউসটি সম্পর্কে বলেন, ‘ভাত আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ট্রান্সজেনিক গ্রিনহাউস ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত জাতের ধান উৎপাদনে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। গবেষণার জায়গাগুলো আরও শক্তিশালী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সাহায্য অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন: দেশের ৮৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত: গবেষণা
শাবিকে শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি যুগান্তকারী গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়ায় আমি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।’