গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার বর্তমানে সাড়ে পাঁচ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুলের উৎপাদন হয়েছিল। বেড়েছিল ফুলের দামও।
দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম গদখালী ফুল বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত থাকে ফুলের ভরা মৌসুম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটি।
গদখালী এলাকার কৃষক শাহজাহান জানান, তার আড়াই বিঘা গোলাপ ফুলের খেত এখন গরু ছাগলের খাদ্যতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১২ দিন ধরে ফুলের কোনো বেচাকেনা নেই।
এদিকে বাগান থেকে প্রতিদিনই দেড় থেকে দুই হাজার গোলাপ তুলে গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। গোলাপ না তুললে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই, অন্যদিকে ফুল তোলার জন্যে শ্রমিক খরচ হচ্ছে। প্রতিদিনই শাহজাহানের লোকসান হচ্ছে দুই হাজার টাকা।
পানিসারা এলাকার ফুল চাষি শের আলী বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। বাংলা বর্ষবরণ উৎসবকে সামনে রেখে ফুল উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কয়েক লাখ টাকা গোলাপ বাগানে বিনিয়োগ করা আছে। ঠিক সেই সময়ে করোনাভাইরাসের দুর্যোগের কারণে ১২ দিন ধরে পরিবহন-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফুলের বাজার বসছে না। খেত থেকে প্রতিদিনই দেড় হাজারের বেশি গোলাপ তুলে গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে।
‘শুধু আমি না, এই এলাকার সকল ফুল চাষি এমন বিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গরু দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে,’ যোগ করে তিনি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গদখালীর পাইকারি ফুলের বাজার ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছে না। আবার খেতে ফুল রাখতেও পারছে না। এরকম উভয় সংকটে পড়েছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে যশোর অঞ্চলে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনই কৃষকদের খাদ্য সরবরাহ ও বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য ফুল চাষিদের পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।