বন্যা ও ভূমিকম্পে ২০১৬ সালে ভেঙে পড়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের বেরুবাড়ী ছড়ার উপর নির্মিত সেতুটি। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ৬টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পণ্যবাহী পরিবহন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে না পারা এবং আগুন ধরলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছেন স্থানীয়া। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দফায় দফায় অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার এসব গ্রামবাসী।
৭ বছর থেকে কেন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এখানকার মানুষ - এ প্রশ্ন সর্বত্র। তাই জনদুর্ভোগ নিরসনে অবিলম্বে নতুন করে সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ
স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, পাকিস্তান শাসনামলে বেরুবাড়ীর ছড়ার উপর প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে আর মেরামত করা হয়নি। ২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুর পশ্চিম দিকে ২০ মিটার অংশ এবং পূর্ব দিকে ১০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এতে চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি।
একই বছর সেতুর নিচ দিয়ে একটি ট্রাক্টর যাওয়ার সময় সেতুটিতে ধাক্কা লাগে। এতে আরও ভেঙে যায় সেতুটি। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বেরুবাড়ী সেতুটি। ফলে নাগেশ্বরী উপজেলার সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বেরুবাড়ী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
২০১৭ সালে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতা ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে ওই সেতুর উপর কাঠ একটি সাঁকো নির্মাণ করে এলাকাবাসী। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই কাঠের সাঁকোটি সংস্কার না করায় সেটিও ভেঙে যায় এবং সম্প্রতি বন্যায় সেতুর একটি অংশ দেবে গিয়ে সেতুটি এখন এলাকাবাসীর মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে স্থানীয়রা। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা।
নাগেশ্বরী উপজেলার হাজিপাড়া, সরকারপাড়া, মন্ডলপাড়া, মিরারভিটা, চর বেরুবাড়ী, চর শালমারা, আকন্দপাড়া ও বেরুবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন ওই সেতু ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া স্কুল কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেরুবাড়ী বাজার হয়ে উপজেলা শহরে অফিস-আদালতে যেতে এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়।
স্থানীয় মিরারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বেরুবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগেশ্বরী মহিলা সরকারি কলেজ, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ এবং ওই ইউনিয়নের প্রায় ৫টি ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে।
বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান আলী বলেন, ‘২০১৬ সালে ভূমিকম্পে সেতুটির দু’পাশে দেবে গিয়ে ভেঙে যায় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না। সেতুতে যাতায়াতের সড়কটি আইডিভূক্ত না হওয়ায় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, জটিলতটা আছে, সেতুটি সহসাই হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে কথা হলে কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালে সেতুটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ২৩৬টি নতুন রাস্তাকে আইডিভূক্তির তালিকায় সেতুটির নাম পাঠানো হয়েছে। যদি সড়কটি আইডিভূক্ত হয় তাহলে সেতু নির্মাণ সহজ হবে। আশা করছি সেটি দ্রুত সম্ভব হবে।’