তারা বলছেন, আমন মওসুমে ধান লাগানোর পর জমিগুলো পড়ে থাকতো। তবে এবার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় সেসব জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফসলও ভালো হয়েছে। ভালো ফলন দেখে এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ ফসল চাষে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি পূরণ হবে স্থানীয় সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও।
সরেজমিনে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, কয়রার আমাদি ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রাম ও দুই নম্বর কয়রার এক হেক্টর জমি ছেয়ে আছে হলুদের আভায়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই হলুদের ছড়াছড়ি। চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এক অপরূপ সৌন্দর্য। মাঠের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায় ভোজ্য ফসল সূর্যমুখীর বাহারি শোভায়। বাতাসে দোল খাওয়া সূর্যমুখীর হাসিও চোখে পড়ার মতো। এতে সূর্যমুখী ফুলের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও।
কয়রার আমাদি ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রাম ও দুই নম্বর কয়রার লবণাক্ত পতিত জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে সফল হয়েছে কৃষি বিভাগ।
সুভাস মন্ডল নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, আমি ১৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। ২৫-৩০ বছর ধরে লবণাক্ত এ জমি পড়ে থাকতো। আমন ধান ছাড়া আর কোনো ফসল এখানে হতো না। পরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষের পরামর্শ দেয়। তারাই জমির চাষাবাদের খরচ, সার, বীজ ও কীটনাশক দিয়েছে। যে কারণে বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. জাহিদ হাসান বলেন, কয়রার চন্ডীপুর গ্রাম ও দুই নম্বর কয়রায় এবার এক হেক্টর লবণাক্ত জমিতে লবণ-সহিঞ্চু সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। নিয়মিত এলাকা পরিদর্শন করে কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন ও তিন নম্বর কয়রায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বারি, খুলনার তত্ত্বাবধানে এম এল টি সাইট কয়রার উদ্যোগে চন্ডীপুর গ্রামে বারি সূর্যমুখী-২ ও ৩ এক হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআইয়ের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় এ গবেষণা কাজটি পরিচালনা করছেন খুলনার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. মো. হারুনর রশিদ।
ড. মো. হারুনর রশিদ বলেন, সূর্যমুখী একটি লবণ সহিষ্ণু ফসল। দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ জমি পড়ে থাকে। মাটি ও পানিতে লবণ থাকায় সহজে অন্য কোনো ফসল ফলানো কঠিন। সেখানে বিনা চাষে ডিব্লিং পদ্ধতিতে দুটি সেচ দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করা যায়। এটি একটি উৎকৃষ্ট তেল ফসল।
১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী তেল ফসল হিসেবে চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে পটুয়াখালী, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে সীমিত চাষ হলেও খুলনাতে তেমন চাষ হয় না। এর বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক এসিড রয়েছে। এছাড়া এই তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড না থাকায় তা হার্টের রোগীদের জন্য উপকারী।