প্রায়শই বলা হয়ে থাকে, আক্ষরিক এমন কিছুই নেই যা আপনি নীলক্ষেতে খুঁজে পাবেন না।
তবে মার্চ মাস থেকে, করোনা মহামারি এরপর লকডাউনের কারণে এই মার্কেটগুলোর কোলাহল গ্রন্থাগারকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
তবে কৃতজ্ঞতাবশত, একদল তরুণ এবং উদ্যোক্তা ভাইরাসটির অভিশাপকে অস্বীকার করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তারা নীলক্ষেতে থাকা অনেক বিক্রেতার মধ্যে কয়েকজনকে বইয়ের ক্রমবর্ধমান অনলাইন মার্কেটপ্লেসে উঠতে সহায়তা করে।
তাহমিদ হাসান ও রাফিউল চৌধুরী যখন প্রায়ই নীলক্ষেতের বইয়ের রাস্তার পাশে দুটি পুস্তক বিক্রেতার ব্যর্থ প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেন তখন গ্রন্থমঙ্গল নামে একটি প্রকল্প ‘পাশে আছি ইনেশিয়েটিভ’র (স্ট্যান্ডিং উইথ) সূচনা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ ইউএনবিকে বলেন, ‘এরপর আমরা আমাদের মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে গৃহহীনদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ শুরু করেছি।’
‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এই বিক্রেতারা যারা অল্প লাভের জন্য করেন তাদেরও সহায়তা করা দরকার। তাদের থেকে কম দামেও কেউ বই পড়ে না ... যদি এভাবে চলতে থাকে তবে এই এলাকার বইয়ের দোকানগুলো ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এবং এটি দেশের বইপ্রেমীদের জন্য দু:সংবাদ হবে।’
প্রাথমিকভাবে, ‘পাশে আছি ইনেশিয়েটিভ’ বিপুল পরিমাণে এই দুই বিক্রেতার কাছ থেকে বই কেনে এবং সেগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে ২০০ টাকা নির্ধারিত হারে বিক্রি শুরু করে। এর ফলে তারা ভালো সাড়া পেয়ে গ্রন্থমঙ্গল প্রকল্পটি সরিয়ে নিয়ে নীলক্ষেতের সুনির্দিষ্ট বই বিক্রয়কারীদের ব্যবসার জন্য স্থির রাখতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেন।
তাহমিদ বলেন, ‘এই বইগুলোর উপার্জন মানবিক কারণেও ব্যয় করা হয়। প্রাথমিকভাবে, উপার্জনের একটি অংশ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়েছিল যারা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এখন আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিচ্ছি।’
মে মাসে শুরু হওয়ার পর প্রকল্পটি বর্তমানে নীলক্ষেত এলাকার ৫০ টিরও বেশি ইট ও মর্টার স্টোরের সাথে কাজ করছে। ‘পাশে আছি ইনেশিয়েটিভ ’ স্বেচ্ছাসেবক ব্যতীত প্রকল্পটি এখন প্যাকেজিংয়ের জন্য বেকার শ্রমিকদের এবং কাজের বাইরে রাইডশেয়ারিংয়ের ডেলিভারির জন্যও কাজ করে।
প্রথমদিকে, প্রকল্পটি কেবলমাত্র বাল্কে কেনা নতুন বই বিক্রি করেছিল তবে এখন তারা নীলক্ষেত বিক্রেতাদের কাছ থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড এবং বিরল বই সংগ্রহ করছে।
এগুলো ছাড়াও গ্রন্থমঙ্গল প্রকল্প প্রায়শই ক্রেতাদের কাছ থেকে দান করা বইগুলো সংগ্রহ করে। ‘পাশে আছি ইনেশিয়েটিভ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা একাডেমিক বই এবং সাহিত্যিক উভয়ই বই বিক্রি করে।
তিনি বলেন, ‘এটি বেঁচে থাকার প্রশ্ন এবং এই সঙ্কটকালীন সময়ে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ফলস্বরূপ জাতিকে সাহায্য করতে হবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারা বইয়ের দোকানগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রকল্পটি শুরু করলেও কোভিড-১৯ এর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট এখনও তাদের বেশির ভাগকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে রেখেছে।
পাশে আছি ইনেশিয়েটিভ বর্তমানে এবং তাদের অন্যান্য মানবিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশজুড়ে প্রসারিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বলে ইউএনবিকে জানান তিনি।
বর্তমানে তারা ঢাকার বাইরে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত চার্জে এবং ঢাকার ভিতরে বিনামূল্যে বইয়ের ডেলিভারি দেন।