এ বছরের জুলাই মাসে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর ফলে মাত্র ৫ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া-আসা করা যাবে অনায়াসেই, এর আগে যেখানে অন্তত ১০ ঘণ্টা সময় লাগত।
রেলওয়ে (পশ্চিমাঞ্চল) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-দর্শনা রুটে দুটি ট্রেন থাকছে। এ পথে ঢাকা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ট্রেনযাত্রায় সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
ঢাকা-দর্শনা রুটে প্রথম ট্রেনটি দর্শনা থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে দুপুর ১২টায় এবং ফিরতি যাত্রায় ঢাকা থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে ট্রেনটি দর্শনায় পৌঁছাবে বিকাল ৪টায়। দ্বিতীয় ট্রেনটি ঢাকা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টায় ছেড়ে দর্শনায় পৌঁছাবে ৯টা ৪০ মিনিটে এবং দর্শনা থেকে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় ফিরবে পরদিন ভোর ৫টায়।
এ সময় থেকে খুলনা থেকে ঢাকা, কুষ্টিয়া, মোবারকগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর রেলস্টেশন হয়ে ঢাকাগামী সরাসরি চলাচলকারী তিনটি ট্রেন- চিত্রা, বেনাপোল ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস সরিয়ে যশোরের রুপদিয়া বা পদ্মবিলা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।
তবে খুলনা থেকে রাজশাহী, উত্তরবঙ্গ চিলাহাটি ট্রেন আগের মতোই চলাচল করবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর- দেশে এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। লোকাল ট্রেনের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩৯ পয়সা, আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা আর কিলোমিটার প্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সড়কের মতো ট্রেন লাইনও ভাগ হচ্ছে। আগে আমরা টিকিট কাটার সময় মতো পোতাম না, ব্ল্যাকে কিনতে হতো। এই দুটি ট্রেন চালু হলে আমাদের সুবিধা হবে। আমরা যাত্রীরা টিকিট সময়মতো পাব বলে আশা করি। এছাড়া ঢাকায় যাওয়ার জন্য সময়ও কম লাগবে।’
তবে নতুন দুটি ট্রেন চালু হওয়াতে স্টেশন সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্টেশনের পাশের আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঢাকার তিনটি ট্রেন যদি এ রুটে বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে আমাদের ব্যবসা কমে যাবে। কারণ যে দুটি ট্রেন চলাচল করবে, ওই সময় কেউ সেভাবে হোটেলে থাকবে না।’
দর্শনার স্টেশন এলাকার ভ্যানচালক করিম মিয়া বলেন, ‘দর্শনা থেকে নতুন ট্রেন চালু হলে আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। কারণ খুলনা থেকে অনেক যাত্রী দর্শনা বর্ডার হয়ে ইন্ডিয়া (ভারত) যায়। নতুন রুট চালু হলে আমাদের ভাড়া কম হবে।’
ঢাকা জর্জ কোর্টের আইনজীবী আবু সাইদ বলেন, ‘নতুন দুটি ট্রেন চালু হওয়াতে আমাদের মতো ঢাকাগামী ও ঢাকাকেন্দ্রিক কাজকাম থাকা ব্যক্তিদের সুবিধা। কারণ এই দুটি ট্রেন যে সময় চলাচল করবে, একজন ব্যক্তি দিনে ঢাকা যেয়ে কাজকর্ম শেষ করে আবার দিনেই বাসায় চলে আসতে পারবেন।’
এক টিকিট চেকার (টিটি) বলেন, ‘রেলওয়ে কতৃপক্ষ যে মাস্টার্স প্ল্যান করছে, এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আমাদের ডিউটি সলিড উইল পরিবর্তন হবে এবং আমি মনে করি দর্শনা চেকপোস্টের যাত্রীদের দ্রুত তাদের গন্তব্যে যেতে সুবিধা হবে। আর সব ট্রেনই যেহেতু চুয়াডাঙ্গা হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে সবাই সুবিধা পাবে।’
দর্শনা রেলওয়ে বুকিং সহকারী মিন্টু কুমার রায় বলেন, ‘চলতি বছর জুলাই থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুন রুটের কর্যক্রম শুরু হলে রেলওয়েতে কর্মরত ব্যক্তিদের অনেক সুবিধা হবে। ট্রেনের চাপ কম থাকবে, এতে দুর্ঘটনার হারও কমে আসবে।
‘বিশেষ করে দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার যাত্রীদের সুবিধা হবে। দিনের দিন ঢাকাতে যেতে পারবে, আবার দিনে কাজ শেষ করে চলে আসতে পারবে। অন্যদিকে ট্রেনের টিকিটও সব সময় সহজে মিলবে।’
চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান চালু হলে এ রুটের তিনটি ট্রেন যশোর হয়ে ঢাকা যাবে। আর আমাদের রুটে নতুন শিডিউল করে দুটি ট্রেন দেওয়া হবে।’
তবে এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ-নির্দেশ এখনও পাননি বলে জানান এ কর্মকর্তা।