জামাল মুন্সির বয়স ৩২। বাবা আয়নাল মুন্সি ছিলেন আদর্শ কৃষক। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাঝে মধ্যে কৃষি কাজ দেখতে যেতেন তিনি। সেই থেকে এ কাজের প্রতি বিশেষ টান তার।
কথা হচ্ছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের নিখুরহাটি গ্রামের তরুণ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কথা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েও তিনি এখন জেলার আদর্শ কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
বছর দুয়েক আগে জামাল মুন্সি ৫৪ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেন বিদেশি ফল ড্রাগনের। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে হন প্রকৌশলী । তবে কর্মক্ষেত্রে তিনি কৃষিকেই বেছে নিয়েছেন। তার ছোট বেলার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেন ড্রাগন বাগানে।
জামাল মুন্সি জানান, পড়ালেখার সময় ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এলেই নেমে পড়তেন কৃষি কাজ নিয়ে।
আরও পড়ুন: খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
তিনি তার কৃষি কাজের পাশাপাশি নিজেই খুলেছেন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম এশিয়ান পাওয়ার টেক কোম্পানি লিমিটেড। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে গড়ে তুলি ড্রাগন ফলের বাগান।
তিনি বলেন, ‘আমার বাগানে এখন ৮-৯ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করেন। এই বাগান থেকে প্রথম বছরের ভালো লাভের মুখ দেখেছি। এবার আরও ভালো ফল হয়েছে। আশা করছি গত বছরের চেয়ে বেশি আয় হবে।’
এখন ফরিদপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ড্রাগন ফলের বাগানটি জামাল মুন্সির। জেলা ও আশেপাশের জেলা থেকে লোকজন আসছেন তার বাগানের ড্রাগনে বাগান দেখতে।
কেউ আসছেন ড্রাগন ফলের চারা কিনতে, আবার কেউ আসছেন কীভাবে বাগান করবেন তার পরামর্শ নিতে।
আরও পড়ুন: বাজেট: কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার
সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন থাকায় দেশে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদার কারণেই তিনি এই ফলের চাষে নেমে পড়েন বলে জানান জামাল।
জামাল মুন্সি বলেন, আমার বাগান দেখে প্রায় শতাধিক বেকার যুবক ড্রাগন চাষের পদ্ধতি শিখে নিজেরা এই ফলের চাষ শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আমি গিয়ে তাদের বাগানে জন্য পরামর্শ দেই।
ড্রাগনের পাশাপাশি বিদেশি খেজুর, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেছেন বলে জামাল জানান।
তার বাবা আয়নাল মুন্সি বলেন, ‘ভালো লাগে যখন দেখি আমার ছেলে ড্রাগন বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসে। স্বপ্ন ছিল জামালকে বড় কোনে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দেখব। তার পরে সে যা করছে তাতে মনে কষ্ট নেই।’
আরও পড়ুন: টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, ড্রাগন ফলের বাগান করতে প্রথমদিকে খরচ হলেও পরে আর তেমন খরচ থাকে না। শুধু প্রয়োজন ঠিকঠাক পরিচর্যা করা।
তিনি বলেন, ‘জেলায় অনেকেই এখন এই ফলের চাষ করছে। তবে জামাল তাদের মধ্যে অন্যতম। তার মধ্যে কৃষি কাজের আগ্রহ অনেক। একজন প্রকৌশল হয়েও তিনি কৃষি কাজকে ছোট ভাবেনি, এটাই যুব সমাজের কাছে একটা উত্তম ম্যাসেজ।’