দেশব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ সুবিধার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের (ওএনএম) দায়িত্ব নিতে প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নতুন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি (পিটিসি)-পিএলসি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু হতে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
অফিসিয়াল সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর থেকে অন্য সংস্থা থেকে এনে এবং নতুন করে ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা এখনো বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন এই কাজের জন্য সক্ষম হয়ে উঠতে পারেনি।
বিষয়টি স্বীকার করে পিটিসি-পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পেট্রোলিয়াম জ্বালানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে তার সংস্থার আরও কিছু সময় প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: আগামী ২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ৮০৪ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
তিনি ইউএনবিকে বলেন, 'এগুলো অত্যন্ত কারিগরি কাজ। জ্বালানি সঞ্চালন সুবিধার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি।’
পিটিসি-পিএলসি ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
বিপিসির ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক আদেশের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিপিসির পাইপলাইনগুলো অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও সমন্বয় করতে পিটিসি-পিএলসি গঠন করা হয়।
জয়েন্ট ক্যাপিটাল কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস রেজিস্ট্রেশন (আরজেএসসি) কর্তৃপক্ষের আওতায় নিবন্ধন পেতে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধসহ ১ হাজার কোটি টাকা মূলধনের অনুমোদন দেওয়া হয় এই নতুন পিটিসি-পিএলসির জন্য।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিটিসি-পিএলসি নতুন যেসব প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবে সেগুলো হলো- (ক) ডাবল পাইপলাইনযুক্ত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম); (খ) ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প, (গ) পিতলগঞ্জ (কাঞ্চনব্রিজের নিকটবর্তী) থেকে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো (কেএডি) পর্যন্ত পাম্পিং ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্পসহ জেট এ-১ পাইপলাইন; (ঘ) চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম তেল পরিবহন প্রকল্প।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার: পরিবেশ সচিব
আমদানি করা পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে চারটি প্রকল্পের আওতায় ডিপো, প্রধান স্থাপনা ও শোধনাগারে সাশ্রয়ী উপায়ে প্রেরণ করবে পিটিসি-পিএলসি।
তবে এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে শুধু ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পটি গত বছর থেকে চালু হয়েছে এবং বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি সূত্র জানায়, এসপিএম প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং চলতি বছরের জুনের মধ্যে বিপিসির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসপিএম প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু পিটিসি-পিএলসির সক্ষমতা সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার জন্য চীনা ইপিসি ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি) কয়েক বছরের জন্য প্রকল্পটি পরিচালনা করবে এবং পরে বিপিসির মাধ্যমে পিটিসি-পিএলসির কাছে হস্তান্তর করবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তরুণদের