নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবলা হাসলা ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত হাসলা এলাকায় নবগঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রায় ১শ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানা গেছে। এর কারণে হাসলা ও পাটকেলবাড়ি গ্রামে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর ৯ পরিবারের ১৩টি পাকা ও আধা পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ, দু’টি ইটভাটা এবং তিন শতাধিক গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনটি ইটভাটা ও পাঁচটি বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। গত ১ অক্টোবর এলাকাবাসী বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ, নদী ভাঙনরোধ ও নদীর তীর স্থায়ী সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন করলেও বালু উত্তোলনকারীররা থামেনি।
আরও পড়ুন: তাহিরপুরে নতুন বাজার থেকে শ্রীপুর বাজারের বেহাল সড়কে ভোগান্তি
জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার বাবলা হাসলা ইউনিয়নের তিনশ বছরের পুরোনো শুক্তগ্রাম বাজার, শুক্তগ্রাম কুমার ও চর পাড়া, হাসলা, চান্দেরচর, পাটকেলবাড়ি ও কাঞ্চনপুর গ্রাম তিন দশক ধরে প্রতি বছরই কম-বেশি নবগঙ্গা নদীতে ভাঙছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক দোকান ও বসত-বাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, তিনশ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা-গোরস্থান, মন্দির ও বেড়িবাঁধ রয়েছে। এ বর্ষা মৌসুমেও প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এ অবস্থার মধ্যেও গত ১ বৈশাখ থেকে আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর এ ইউনিয়নের বৃ-হাসলা মৌজার বালুর চরটি কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের দিয়াডাঙ্গা গ্রামের ত্বকি সরদারের নামে প্রশাসনের কাছ থেকে দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় জরুরি বাঁধ মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাৎ!
হাসলা গ্রামের মোশাররেফ হোসেন বলেন, ‘বালুর চরের ইজারাদার বৃ-হাসলা মৌজায় ৯ একর জায়গার চর থেকে কাটার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে এসে দেড়’শ একরের বেশি জায়গায় রাত-দিন বালু উত্তোলন করছে। আগে ৩৫ ট্রলার ও ড্রেজার দিয়ে বালু কাটলেও বর্তমানে প্রায় ১৫টির মতো ড্রেজার দিয়ে কাটছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুল এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এলাকার কয়েকশ মানুষ নিয়ে মানববন্ধন করেছি, কালিয়া থানার ওসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কেউ এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
হাসলা গ্রামের হাসি বেগম জানান, ‘আমার বাড়ির সামনে বালি কাটছে। গত ১ মাস আগে আমার একটি ঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। বড়ো ঘরটি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছি। গ্রামের জাফরুল মোল্যা, জোমাত সিকদার ও জাবেদ খানসহ অনেকেরই ১২টি ঘর চলে গেছে। এছাড়া শামসুর রহমান ও তানজিলাসহ অন্যানদের বাড়ি ভাঙনের মুখে। এখন অনেকে আবার নিজেরা ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ইউনিয়নের মেম্বর বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হাসলা মৌজা লাগোয়া পাটকেলবাড়ি এলাকার অনেক ফসলি জমি, দু’টি ইটভাটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও তিনটি ভাটা ও অনেক ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে।’
বালু ঠিকাদার ত্বকি সরদারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: করতোয়া নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ!
তবে চরের ইজারাদার মো. মোশারফ জানান, নির্দিষ্ট চরের বাইরে এবং রাতের আঁধারে বালু কাটা হচ্ছে না। কৃষি জমি ও ঘর বাড়ি নদী গর্ভে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, কিছু ফসলি জমি ও বাড়ি ভাঙছে এটা কিছুটা সত্য। তবে বালুর চর থাকলে সেখান থেকে বালু না কাটলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে নদীর যে কোনো তীর ভাঙার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বালু কাটার জন্য মসজিদ, সংগঠনে অনুদান ও বিভিন্ন মহলকে খুশি করতে হয় বলে জানান।
স্থানীয় বাবলা-হাসলা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুলের সাথে যোগযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টির অভিযোগ পাওয়ার পর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন অভিযোগের কিছু সত্যতা আছে। তবে লিখিত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।